সিনহা হত্যা: সেই রাতে কী ঘটেছিল

৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান। সেদিন সন্ধ্যা থেকে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত সিনহার অবস্থান কোথায় ছিল। তা জানার চেষ্টা করেছে সময় সংবাদ।

৩১ জুলাই বিকেল চারটা। পাহাড়ি পথ ধরে দিনের কাজ শুরু করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। সেদিন নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘জাস্ট গো’ এর শ্যুটিং করতে সহকর্মী সিফাতকে নিয়ে মেরিন ড্রাইভের পাশের গাড়ি রেখে মাথাভাঙ্গা সাইক্লোন সেন্টারের পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে যান মইন্যা পাহাড়ের দিকে।

দুর্গম সেই পাহাড় দেখলেই বোঝা যায় আগে না এসে থাকলে কিংবা কেউ পথ না দেখালে প্রথম দফায় সেখানে পৌঁছানো ততটা সহজ নয়। অন্যদিকে এই পাহাড়ে যেতে যেতে পথে কিংবা চুড়ায় উঠলেই চোখে যে সৌন্দর্য ধরা পড়ে তাতেই বোঝা যায় যেকোনো ভ্রমণ পিপাসুর এই পাহাড়ে ওঠা পুরোপুরি যৌক্তিক।

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যার পেরিয়ে রাত আটটার পরে সঙ্গী নিয়ে পাহার থেকে নেমে আসেন সিনহা। ঠিক তখনই মসজিদ থেকে ভেসে আসছিল এলাকায় ডাকাত পড়েছে। যদিও পরে স্থানীয়া দাবি করেছে প্রায়ই রোহিঙ্গা ডাকাত দল এখানে এসে লুট করতো, তাই সেদিন পাহাড়ে আলো দেখে তারা এমনটাই ভেবেছিলেন। যদিও সেই পাহাড়ে উঠে তেমন কোনো আলামত চোখে পড়েনি।

এরপর নিজের গাড়ি নিয়ে নীলিমা রিসোর্টের দিকে ফিরছিলেন সিনহা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় ৯টা ২২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড। কর্তব্যরত এক বিজিবি সদস্যের ইশারায় চেকপোস্টের সামনে দাঁড়ায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার রূপালী রঙের গাড়ি। কথোপকথনের ঠিক ছয় সেকেন্ডের মাথায় মেজর সিনহাকে স্যালুট জানান ওই বিজিবি সদস্য। গাড়িটি চলতে শুরু করার আগ পর্যন্ত তিনবার একইভাবে স্যালুট দিয়ে মেজর সিনহাকে সম্মান জানান ওই বিজিবি সদস্য। এবার গাড়িটি চেক পোস্ট অতিক্রম করার সময় সড়কের অপর প্রান্তে দায়িত্বরত অপর বিজিবি সদস্যও স্যালুট জানান সিনহার গাড়িটিকে উদ্দেশ্য করে।

এরপরই শামলাপুর এপিবিএনের চেকপোস্টের দিকে স্বাভাবিক গতিতে চলে যায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার ব্যক্তিগত গাড়িটি। এর এগারো কিলোমিটার দূরের এপিবিএনের শামলাপুর চেকপোস্টে ওই রাতে কী ঘটেছিল সে ঘটনা সবার জানা।

কিন্তু একই সিটিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মেজর সিনহার গাড়িটি চলে যাওয়ার ঠিক ৩২ মিনিট পর চেকপোস্ট অতিক্রম করে একটি মাইক্রোবাস। ঠিক এর পেছনেই ছিল পুলিশের একটি পিকআপ। এই গাড়ি দুটি অনেকটা ক্ষিপ্র গতিতে চেকপোস্ট অতিক্রম করলেও হতে হয়নি কোনো বাঁধার সম্মুখীন।

সূত্র বলছে, ঠিক তখন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ ও তার দলবল দ্রুতগতিতে চেকপোস্ট অতিক্রম করে এগিয়ে যান শামলাপুর চেকপোস্টের দিকে। ততক্ষণে পুলিশের গুলিতে লাশ হয়ে শামলাপুর চেকপোস্টে পড়ে ছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা।