নেশা করিয়ে একাধিকবার ‘শারীরিক সম্পর্ক’ করেন ইভান
ঘর বাঁধার রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে রাজধানীর বনানীর ধনীর দুলাল ইভান এক তরুণীর সঙ্গে একাধিকবার ‘শারীরিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলেন। বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক হয়েও প্রতিবারই তিনি শিগগিরই বিয়ে করবেন বলে প্রলোভন দেখান। প্রতিবারই সুকৌশলে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে মেলামেশা করতেন। এভাবে তাদের মধ্যে সাত থেকে আটবার ‘শারীরিক সম্পর্ক’ হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বাসায় নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ইভান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাধিক চিকিৎসক জানান, শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় ওই তরুণী কীভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তা বর্ণনা করেন। তরুণী এর আগে বিয়ে এবং মৃত সন্তান প্রসব করেন বলে জানান।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, তরুণী বিবাহিত ও আগে সেক্সুয়ালি অভ্যস্ত হওয়ায় জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ায় নেশাজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রমাণ পাওয়াও দুষ্কর। তবে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলেও জানান।
‘রাজধানীর বনানীসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ধনীর দুলালদের আমন্ত্রণে গভীর রাতে জম্মদিনসহ বিভিন্ন পার্টিতে যোগ দেয়ার ঘটনায় তরুণীদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তরুণী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি গভীর রাতে তরুণীদের পার্টিতে যোগ দেয়ার সমালোচনা হচ্ছে।’
বনানীর এ ধর্ষণের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ঠিক এভাবে অভিমত ব্যক্ত করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার রাতে বনানীর ২ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বরের ন্যাম ভিলেজের বাড়িতে যখন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় তখন বাড়িতে ইভানের বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। তখন তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। মামলার এজাহারে বর্ণিত তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বাদীর দেয়া তথ্য মতে, ঘটনার দিন ইভান তার মায়ের পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে একজনকে কথা বলিয়ে দেন। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ওই নারীই তরুণীকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসার দাওয়াত করেছিলেন।
ইভানের কললিস্ট দেখে সেদিন কে কথা বলেছিলেন তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেন ওই তরুণী একাধিক সেট পোশাক নিয়েছিলেন- সেটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, সেই রাতে বাসায় গিয়ে তিনি কোনো ধরনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আলামত দেখতে পাননি। ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলে ইভান তাকে বাড়ি ফিরতে দেয়নি। তারপর তারা রাতের খাবার খান এবং ইভান তাকে জোর করে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ান। সেটি খেতে অস্বীকৃতি জানালে ইভান তাকে বলেন, একদিন খেলে কিছু হবে না। এরপর রাত দেড়টার দিকে ইভান ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন।
তরুণী বলেন ‘ধর্ষণের সময় আমি চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি রেখে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ইভান। পরে এক পথচারীর সাহায্যে নিজ বাসায় ফিরে আসি।’
তরুণীর দাবি, সেই রাতে ইভান যে ব্যাগটি রেখে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সেটিতে তিনটি ড্রেস, দুটি জিন্সপ্যান্ট, একটি কুর্তা, তিনটি মোবাইল চার্জার, সিমকার্ড, মেমোরি কার্ড এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল।
মামলাটির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার সাব ইন্সপেক্টর সুলতানা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আসামি এখনও পলাতক। তার বাড়িতে গিয়ে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। (বৃহস্পতিবার) ভিকটিম তরুণীর মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে।
আসামিকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগেও জন্মদিনের দাওয়াতে যোগ দিতে গিয়ে বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। গত ২৮ মার্চ দ্য রেইন ট্রি হোটেলের ওই ঘটনায় ৬ মে বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ, শাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
বর্তমানে মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন এবং সকল আসামি কারাগারে রয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন