যশোরের কেশবপুরে

জমজ সন্তানকে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করলেন পাষন্ড মা

যশোরের কেশবপুরে স্বামীর পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের জের ধরে সুলতানা ইয়াসমিন (২৭) নামের এক পাষন্ড মা ১২ দিনের জমজ ছেলে-মেয়েকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

গত মঙ্গলবার রাতে কেশবপুর শহরের সাহাপাড়ার নতুন মসজিদের পাশে স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ডোবা থেকে জমজ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করাসহ ঘাতক মাকে আটক করেছে।
এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত বুধবার সকালে পুলিশ ডোবা থেকে দুটি মরদেহ উদ্ধার করাসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সুলতানা ইয়াসমিনকে গ্রেপ্তার করে। সুলতানা সাহাপাড়ায় বাবা আব্দুল লতিফের বাড়িতে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিককে নিয়ে বসবাস করতেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৪ এপ্রিল কেশবপুর পৌর শহরের সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকার আব্দুল লতিফ হাওলাদারের মেয়ে সুলতানা ইয়াসমিনের সাথে আবু বক্কর সিদ্দিকের বিবাহ হয়। দুইজনের বিয়ের পূর্বেই তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিবাহ ছিলো। সুলতানা ইয়াসমিনের প্রথম স্বামীর অহনা ইয়াসমিন (১১) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুলতানা বুঝতে পারে তার স্বামী আবু বক্কার অন্য নারীতে আসক্ত। সেজন্য স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করে সুলতানা। যার কিছুদিন পর সুলতানা গর্ভে সন্তান আসে। সুলতানার গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় স্বামী আবু বক্কার আরো বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে। তবুও সুলতানা তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হলে স্বামীর স্বভাব চরিত্র পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করে।

দীর্ঘদিন গর্ভ ধারণের পর গত ১০ নভেম্বর রাতে কেশবপুর পৌর শহরের মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সুলতানার জমজ ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে জমজ শিশুদের শারীরিক জটিতলা দেখা দিলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। সেখানে চার দিন চিকিৎসার পর বাচ্চাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।

পুত্র সন্তানটির জন্মের পর হতে ফুসফুস, রক্তসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে কেশবপুর হোসেন প্যাথোলজিতে ডাক্তার কামরুজ্জামানের অধিনে চিকিৎসা করায়। কিন্তু সুস্থ্য না হওয়ায় গত ২১ নভেম্বর পুত্র সন্তানটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে পুত্র সন্তানটি নিস্তেজ হয়ে যায়। ওইসময় সুলতানা মৃতপ্রায় পুত্র সন্তানটিকে বাড়ির পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করে।

এরপর ঘরে ফিরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং কন্যা সন্তানটিকেও সকলের অগোচরে একই ডোবায় জীবন্ত নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে সুলতানা ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মিথ্যা কাহিনী তৈরি করে। পরিবারের সকল সদস্যরা বাচ্চা দুটিকে খোজাখুজি করতে থাকে। ওইসময় সুলতানার পিতা আব্দুল লতিফ বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফোন করে থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোজাখুজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে প্রথমে পুত্র সন্তানটির মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল প্রস্তুুত করেন এবং অপর নিখোঁজ কন্যা বাচ্চাটিকে খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানটির মৃত অবস্থায় একই ডোবা হতে উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে সুলতানা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা তার পুত্র সন্তানসহ জীবিত কন্যা সন্তানটিকে সকলের অগচরে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতিয়মান হয় যে, সুলতানা ইয়াসমিন স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজ সন্তানদের ডোবায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে। গত বুধবার সকালে সুলতানাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সুলতানা ইয়াসমিন হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে।