গডফাদার অধরা, পিএস গ্রেফতার

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে চোরাকারবারীর মৃত্যু

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে ভারতের গুহায়ার ভিতরে আবারো এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হয়েছে। তারা নাম- লোকমান মিয়া (২০)। সে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা পূর্বপাড়া গ্রামের বকুল মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে চোরাকারবারীদের গডফাদার এখনও রয়েছে অধরা।

তবে তারই সুযোগ্য কোটিপতি পিএসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম- রফ মিয়া (৩৬)। সে জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের চান মিয়ার ছেলে ও যুবলীগ নেতা। আজ রবিবার (১২ই জানুয়ারী) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারী) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাও, বালিয়াঘাট, টেকেরঘাট, চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে একযোগে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু হয়।

এমতাবস্থায় দুপুরে টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের মাঝে অবস্থিত লাকমা এলাকার ভারতের ভিতরে তৈরি করা শতাধিক চোরাই কয়লার গুহা থেকে গডফাদার তোতলা আজাদের সোর্স বাহিনী শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে টেকেরঘাটের নীলাদ্রী লেকপাড় ও কয়লারঘাটসহ বালিয়াঘাট সীমান্তের পাটলাই নদী তীরে, দুধের আউটা, তেলিগাঁও, বানিয়াগাঁও, জামালপুর গ্রামে নিয়ে পৃথক ভাবে মজুত করার সময় ভারতের চোরাই কয়লার গুহার ভিতরে চোরাকারবারী লোকমান মিয়ার মৃত্যু হয়।

সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদ তার পিএস উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রফ মিয়ার নেতৃত্বে তাদের দলের সদস্য কলাগাঁও গ্রামের ৫জন, জংগলবাড়ি গ্রামের ১০জন, চারাগাঁও এলাকার ৮জন, বাঁশতলার গ্রামের ৫জন, লালঘাটের ১৫জন, দুধের আউটা গ্রামের ১০জন, লাকমা গ্রামের ১৫জন, বড়ছড়ার ৫জন, বুরুংগা এলাকার ২০জনসহ চাঁনপুর, নয়াছড়া, রাজাই, কড়ইগড়া।

বারেকটিলার আনন্দপুর, লাউড়গড় এলাকার আরো শতাধিক লোক নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য, গরু, ঘোড়া, অস্ত্র, চিনি, পেয়াজ, সুপারী, চিনি, ফুছকা, কমলা, জিরা, কম্বল ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করার পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে চাঁদাবাজি করছে।

আর চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে গডফাদার তোতলা আজাদ প্রায় ৪০কোটি টাকা ও তার সুযোগ্য পি.এস গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা রফ মিয়া ৫কোটি টাকার মালিক হওয়াসহ তাদের প্রত্যেক সোর্সরা হয়েছে জিরো থেকে হিরো।

শুধু তাই নয়, গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স বাহিনীর নেতৃত্বে কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে ভারতের পাহাড়ের গুহায় মাটি চাপা পড়ে, বিএসএফে গুলিতে ও তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে এই পর্যন্ত চারাগাঁও সীমান্তে ১৫জন, বালিয়াঘাটি সীমান্তে ৩৮জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ২২জন, চাঁনপুর সীমান্তে ১২জন ও লাউড়গড় সীমান্তে অর্ধশতাধিক লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও বিজিবির ওপর হামলা চালানোসহ মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে ওই গডফাদার ও তার সোর্স বাহিনী। তারপরও গ্রেফতার হয়নি তারা।

এব্যাপারে বড়ছড়া ও চারাগাঁও শুল্কস্টেশনের বৈধ ব্যবসায়ীরা জানান- সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা মিলে সীমান্ত দিয়ে পৃথক ভাবে দল বেঁধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন শতশত মেঃটন কয়লা ও পাথর পাচাঁর করে শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে, সীমান্তের জাদুকাটা ও পাটলাই নদীর তীরেসহ নদীর তীর সংলগ্ন হাট-বাজার ও সোর্সদের বাড়িঘরের ভিতরে ও উঠানে মজুত করার পর, সাংবাদিক ও প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীর নাম ভাংগিয়ে লাখলাখ চাঁদা উত্তোলন করে।

কারণ পাচাঁরকৃত কয়লা ও পাথর এলসির কয়লা ও পাথর থেকে কম দামে বিক্রি হয়। এরফলে বৈধ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

এব্যাপারে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে প্রতিদিন ফোন করে ক্ষতিগ্রস্থ্য বৈধ ব্যবসায়ী ও এলাকার সচেতন লোকজন আমাকে জানায়। আর রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে আমি একাধিক বার মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছি কিন্তু ন্যায় বিচার পাইনি। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসেনের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার হোসেন বলেন- গতকাল শনিবার (১১ই জানুয়ারী) দুপুরে এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হয়েছে জানতে পেরেছি, সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে চারাগাঁও সীমান্তের কলাগাঁও বাজার থেকে রফ মিয়াকে আমরা গ্রেফতার করেছি। গত ১৬ই ডিসেম্বরের নাশকতায় জড়িত থাকায়সহ তার বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড ও সীমান্ত চোরাচালান, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।