থ্রি-জি সেবায় হতাশ, গ্রাহকরা ফোর-জি নিয়েও শঙ্কায়

ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে সরকার থ্রি-জি সেবা চালু করেছিল। অগ্রগামী পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই ফোর-জি চালুরও ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বোদ্ধা মহল। তবে এ ঘোষণায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। যেখানে থ্রি-জি সেবাই নামমাত্র, সেখানে ফোর-জি সেবা বাস্তবায়নে আস্থা নেই তাদের।

গ্রামীণ ফোন ও রবি থ্রিজি প্যাকেজ ব্যবহার করেন এমন কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘গ্রামীণ ফোন থ্রি-জি, ইচ্ছা হলেই চলো বহুদূর’, রবি ‘জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে’, এয়ারটেল-এ ‘চাচ্চুদের নেটওয়ার্ক ছেড়ে বন্ধুদের নেটওয়ার্কে আসো’- এরকম নানান চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নজর কাড়তে সক্ষম হলেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো। অথচ সেবার নামে নির্ধারিত অর্থ কেটে নিতে এতটুকু কার্পণ্য নেই কোম্পানিগুলোর। এতে করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন থ্রিজি’র গ্রাহকরা।

থ্রি-জি ইন্টারনেট যেখানে অপ্রতুল সেখানে ফোর-জি সেবা চালুর ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দাবি, থ্রি-জি সেবার নামে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো টু-জিও দিচ্ছে না, রীতিমত গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনো শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থাও নেই। সেখানে ফোর-জি চালু করে কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না।

ফ্রিল্যন্সাররাও (আউটসোর্সিং) বলছেন, যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারলে শুধু ঘোষণা দিয়ে ফোর-জি বাংলাদেশে চালুর কোনো প্রয়োজন নেই। এতে ফ্রিল্যন্সাররা বাড়তি কোনো সুযোগ পাবে না, বরং ব্যয় বাড়বে।

কারণ দেশের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে ফ্রিল্যন্সারদের কাজে। তাদের ব্যয় বাড়লে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ফ্রিল্যন্সাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তবে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার যদি ফোর-জি দিতে পারে তাহলে এ উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, এটি যেন থ্রি-জির মতো প্রতারণা না হয়।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আরিফ শাওন থ্রি-জি ইন্টারনেট নিয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, আমার কাছে ইন্টারনেট এখন এক যন্ত্রণা। মোবাইল আপারেটর থেকে থ্রি-জি ইন্টারনেট কিনি। সেটা আবার বাসায় চলে না। কারণ বাসায় ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ফোনে কথা বলতেও সমস্যা হয়। ফলে লোকাল ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের কাছ থেকে ব্যন্ডউইথ নিতে হয়েছে। এতে আমার ডাবল খরচ হচ্ছে। কারণ বাসা এবং বাইরে আমার সমানভাবে ইন্টারনেট খরচ হয়।

ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো সর্বত্র থ্রি-জি চালুর প্রচার করলেও শুধুমাত্র টু-জি’তে সীমাবদ্ধ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আবদুর রহমান চৌধুরী নামের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় ইন্টারনেটের গতির বিষয়ে। রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবাই তো থ্রি-জি, থ্রি-জি বলছে, কিন্তু নেটের গতি তো টু-জির চেয়েও খারাপ। লোড হতেই থাকে হতেই থাকে। কোনো কাজ হয় না। মাঝখানে টাকা তো ঠিক কেটে নেয়। এটা তো রীতিমত প্রতারণা।

মনির হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যন্সার বলেন, ফোর-জি আসলে তো ভালো। কিন্তু সেটা আদৌও ফোর-জি হবে কিনা সেটা দেখতে হবে। সরকারকে অবশ্যই নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। অন্যথায় গ্রাহকদের শুধুমাত্র ব্যয় বাড়বে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এতে ফ্রিল্যন্সাররা বাড়তি কোনো সুযোগ পাবে না। উল্টো খরচ বেড়ে যাবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘প্রথম জিনিসটা হলো- অনেক কম দামে ব্যবসায়ীরা নেট কিনে গ্রাহকদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে গ্রাহকরা অনেক প্রতারিত হচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মানুষ অনেক বেশি দামে নেট কিনে ব্যবহার করছে। এখানে একটা সমন্বয় হওয়া দরকার। যে মূল্যে নেট আমাদের দেশের মানুষ ব্যবহার করছে এর চেয়ে অনেক কম দামে নেট পাওয়া সম্ভব।’

তিনি বলেন, থ্রি-জি’র স্পিডের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু সেখানেও গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে। যে স্প্রিড দেয়ার কথা কোম্পানিগুলো বলছে কিন্তু বাস্তবে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রেও মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।

গণসংহতির এই নেতা বলেন, ‘ফোর-জি আসছে সেটাকে স্বাগত জানাই। দেশে তো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দরকার। আমরাও তো চাই দেশ প্রযুক্তির দিক দিয়ে যাক। কিন্তু মানুষ ফোর-জি কিনে যেন ফোর-জি সেবা পায় সেটার দিকে নজর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রযুক্তি খাতে আমাদের দেশে জবাবদিহিতা নেই। এই খাতে সর্বত্র একটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, থ্রি-জি থেকে ফোর-জি মানে হলো একটা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। বিশ্ব এখন ফাইভ-জি’তে গেছে। তো আমরা যদি ফোর-জি না যেতে পারি তাহলে তো আরো বেশি পেছনে পড়ে যাব।

তিনি বলেন, কথা বলার স্পষ্টতা বলেন, নেটের গতির কথা বলেন – এ সব কিছুর সাথেই প্রযুক্তির সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যদি প্রযুক্তিগত উন্নতি না করতে পারি তাহলে কিভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করব।

মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ফোর-জি চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। খুব তাড়াতাড়িই চালু হয়ে যাবে। আর ফোর-জি ফোর-জি’র মতো করে যাবে। ফোর-জি চালু হলে সর্বশক্তি দিয়ে আমরা চেষ্টা করব গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ যাতে না থাকে।