সিলেটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিপদসীমার ওপরে তিন নদীর পানি

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে সুরমা ও সারি গোয়াইন নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।

এদিকে শুক্রবার সকালে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে আসলেও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে ফিরে যায়।

মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে নগরীর হাওয়াপাড়া, উপশহরসহ নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নাগরিকরা ঘর থেকে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটার ও বুধবার ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

টানা বর্ষণের কারণে সিলেট নগরীতে যানবাহনের সংকটও দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা গাড়িগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। এছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে সংকটে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্নবিত্তরা।

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার সকালে সুরমা নদীর পানি সিলেটে বিপদসীমার ও কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারিগোয়াইনঘাট ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বসত-বাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বসত-বাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জানা যায়, টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি ও সারি এবং পিয়াইন নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, ছৈলাখেল অষ্টম খণ্ড (আংশিক এলাকা) নবম খণ্ড, সানকী ভাঙ্গা, নয়াগাঙের পার, বাউরবাগ হাওর, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, তিতকুল্লি হাওর, বুধিগাঁও হাওর, রাজবাড়ি কান্দিসহ পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুগুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হোসাইন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক হেক্টর আউশ ও বোনা আমন ধান এবং বীজতলা নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর যদি বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয় তাহলে তলিয়ে যাওয়া ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না বলে জানান তিনি।

গোয়াইনঘাটের ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক দিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।