সিলেট জুড়ে প্রতিনিয়ত যানজট বাড়ছে

গোটা সিলেট জুড়ে প্রতিনিয়ত যানজট বাড়ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিক্সা সিএনজির ফলে। সিলেট নগরীসহ আশ পাশ জেলা ও উপজেলায় লাগামহীন অটোরিক্সা সিএনজি বাড়ছে। প্রতিদিন সিলেট নগরী তথা উপজেলা শহরে যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠছে সিএনজি স্ট্যান্ড। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যে জায়গায় চোখ পড়ে সে সব এলাকায় বেশির ভাগ রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিক্সা। আর এসব গাড়ি রোডে চলছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পুলিশকে ম্যানেজ করে। বর্তমানে গোঠা সিলেট বিভাগের রোড গুলোতে চলছে বেশির ভাগ অটোরিক্সা সিএনজি অকশন বা জিডির ভূয়া নাম্বার ব্যবহার করে। এসব গাড়ি আসছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে। অল্প দামে একটি অসাধু চক্র নাম্বারবিহীন সিএনজি ক্রয় করে সিলেটে বিভাগে পুলিশকে ম্যানেজ করে মাসিক টুকনের মাধ্যমে গাড়ি চলছে বলে জানা যায়। সিলেটে বিভাগের রোডগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি অটোরিক্সা চলাচলের ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনার ফলে অনেকে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

এদিকে সিলেট নগরীর মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোরিক্সার স্ট্যান্ড, অটোমেটিক সিগন্যালিং সিস্টেম কার্যকর না থাকা, ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা, রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত রিক্সার অবাধ চলাচল-নগরীতে সড়ক নিরাপত্তা ও যানজটের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জনদুর্ভোগ কমাতে পাবলিক পরিবহন হিসেবে সিএনজি অটোরিক্সার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নগরীতে মিনিবাস নামানোর প্রস্তব দিয়েছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. জহির বিন আলমের মতে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে সিলেটের মানুষের একমাত্র ভরসা সিএনজি অটোরিক্সা। নগরীতে ছোট সাইজের বাস নামানো গেলে সিএনজি’র ওপর মানুষের নির্ভরতা কমে যাবে। পাশাপাশি নগরীর যানজটও কমবে। এ অধ্যাপক বলেন, নগরীর রাস্তা-ঘাটের আকার ছোট। অবশ্য হঠাৎ করে রাস্তার আকার বড় করা যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নগরীতে এক সাথে সবগুলো রাস্তার কাজ শুরুনা করার পরামর্শ তিনির। পরিকল্পিত নগরী সাজাতে পরিবহন সিস্টেম ঢালা ওভাবে সাজানোর প্রস্তব দেন তিনি।

হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, সিলেট নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোরিক্সা-বাসের স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। বিভাগীয় নগরী সিলেটে অটোমেটিক সিগন্যালিং সিস্টেমও চালু নেই। নেই জেব্রা ক্রসিংও। রাস্তার ওপর যত্রতত্র বসে হকাররা ব্যবসা করছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা নেই। আবার নগরীর রাস্তা-ঘাটে যত্র-তত্র স্পিডব্রেকারের কারণে বিঘিœত হয় যানবাহন চলাচলের গতি। ফলে ঘটে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় নগরীতে ট্রাক চলাচলের সময়সূচি নির্দিষ্ট করা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দেন তিনি।
পুলিশ, ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট এখনো পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেনি। আইন-কানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পর্যাপ্ত পার্কিং না রেখেই রাস্তার পাশে নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা। নগরীতে অবাধে চলছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা। অর্থাৎ নগরীতে যে যেভাবে পারছে, যেন সে ভাবেই চলছে। সরেজমিনে, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার টু শাহী ঈদগাহ, আম্বরখানা টু টিলাগড়, বড়বাজার টু চৌকিদেখীসহ আরো কিছু রাস্তায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চলাচল করতে দেখা যায়। তবে, রাত বাড়ার সাথে-সাথে সবগুলোই রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিক্সার অবাধ চলাচল শুরু হয়।
নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার ষাটোর্ধ্ব সিএনজি অটোরিক্সা চালক তসলিম আলী জানান, ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। অনেকক্ষেত্রে চালকরা সিএনজি’র চেয়েও বেশি গতিতে রিক্সা চালায়। প্রায়শ’ তারা ধাক্কা দিয়ে সিএনজিকে ক্ষতিপ্রস্ত করে। অনেকক্ষেত্রে তারা সিএনজি’র মালিককে জবাব দিতে পারেন না।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো: জাকির হোসেন খান জানান, সিলেট নগরীতে যানজটের মূল কারণ অবৈধ সিএনজি। পাশাপাশি চুপিসাওে যে সব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চলাচল করছে- সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেসব অটোরিক্সা ধরা হচ্ছে- সেগুলো ছাড়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এসএমপি’র ডিসি (ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান জানান, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাকে শহর বিমুখ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। গত ৩ মার্চ পর্যন্ত তারা নগরীতে ১৯০টি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও ১৬০টি অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা আটক করেছেন। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা ও আম্বরখানা সড়ক দখল করে হকাররা ব্যবসা করায় নগরীতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি এও স্বীকার করেন, নগরীতে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা নেই। তবে, তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।