গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি

সংরক্ষণের অভাবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার জমিদারবাড়িটি নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। বর্তমানে এটি শুধুই স্মৃতিময় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে টিকে আছে। অথচ সময়মত সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এটি অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয় সুধী মহল।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অযত্ন, অবহেলা আর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এ জমিদার বাড়ির সব স্থাপনাই ধ্বংস হয়ে গেছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সর্বানন্দ ইউনিয়নে ঐতিহাসিক এ জমিদারবাড়ির অবস্থান।

বাড়িটিতে জমিদারদের বসবাসের জন্য ছিল বাসগৃহ, অতিথিদের জন্য অতিথিশালা, রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজদরবার, দুর্গা মন্দির, তিনটি পিরামিড সদৃশ মঠ, ট্রেজারি, গোশালা ও হাতি রাখার জন্য ছিল হাতিশালা। আর এগুলো তৈরি করা হয়েছিল ইট, সুরকি ও লোহা দ্বারা। এ জমিদার বাড়িতে রয়েছে তিনটি দীঘি।

ঠিক কবে বামনডাঙ্গার জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায় চৌধুরীই যে বামনডাঙ্গার প্রথম জমিদার ছিলেন এবং তিনিই এ জমিদারবাড়ির পত্তন করেছিলেন তা জানা যায়।

জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায় চৌধুরীর পরে তার বংশধররা ধারাবাহিকভাবে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে ঐতিহাসিক এ জমিদার বাড়িটির অবকাঠামো, রাজদরবার, ট্রেজারি, অতিথিশালা, দুর্গা মন্দির, মঠ, গরুশালা, হাতিশালা ও প্রাচীরসহ দৃশ্যমান কোন স্মৃতিচিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। অনেক আগেই নিদর্শনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালের দিকে হাতিশালাটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে জানা যায়। আর এই হাতিশালা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক বামনডাঙ্গা জমিদারবাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট নেই।

বর্তমানে জমিদারবাড়ির জমিতে সর্বানন্দ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, একটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক স্কুল, দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও একটি বাজার রয়েছে। খাসজমির মধ্যে ৪৭ দশমিক ২৪ একর জমি ১৬৮ জনকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ও ৩৫ শতাংশ জমি এখনো কোন বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি বলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়।

তিনটি দীঘির মধ্যে একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের মানুষ মাছ চাষ করেন ও বাদি দুটি দীঘি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় দু’এক বয়স্ক ব্যক্তি জানান, ‘জমিদার শরৎ রায় চৌধুরী, তার মেয়ে জমিদার সুমতি বালা চৌধুরী (সুনীতি), জমিদার বীপিন রায় চৌধুরী, তার দুই ছেলে জমিদার মনিন্দ্র রায় চৌধুরী ও জমিদার জগৎ রায় চৌধুরী সকলের জমিদারি আমি দেখছি। তারা হিন্দু হলেও আমাদের খুব স্নেহ করতেন, প্রজাদেরকেও ভালবাসতেন। জমিদারি চলে যাওয়ার পর জমিদার মনিন্দ্র রায় চৌধুরীসহ অন্যান্যরা এক এক করে কলকাতা চলে যান ও জমিদার জগৎ রায় এখানেই মৃত্যুবরণ করেন।’