নাটকের মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়াতে চান অভিনেতা মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ

আলোর পথের এক নিভৃত যাত্রী, এই সময়ের আলোচিত মুখ জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ চট্টগ্রাম মিডিয়া ও মঞ্চে কাজ করে যাচ্ছেন দারুন সমানতালে, তিনি একজন দক্ষ তরুণ সংগঠক নির্মাতা ও নাট্যকর্মী।

অনলাইন-অফলাইনের নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সময়ের প্রিয় আলোচিত মুখ মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ চট্টগ্রাম পাহাড়তলী পশ্চিম ফিরোজশাহ কলোনীতে ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন, তার আদি নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইপুর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ি তে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে।

সেখান থেকে ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এএমআইই হতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন।

মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ ও সাংস্কৃতিককর্মী তানজিনা লুনার দাম্পত্য জীবনে ছেলে মুহ্তাসিন ভূঁইয়া রাহা এবং মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া মারওয়া প্রতিনিয়ত ছড়ায় সুখের পরশ। স্কুলজীবন থেকেই তিনি থিয়েটারের সাথে জড়িত। ১৯৯৬সালে মঞ্চমুকুট নাট্য সম্প্রদায় কর্তৃক মঞ্চায়িত আহম্মেদ ইকবাল হায়দার চৌধুরীর নির্দেশিত “ভালবাসা কারে কয়” নাটকে প্রথম মঞ্চ অভিনয় করেন।

একই বছরে উক্ত নাট্যদল হতে মঞ্চায়িত কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ও সুরুচিত দাশ খোকন এর নির্দেশনায় “মানুষ” নাটকে মঞ্চ অভিনয় করেন। এরপর তিনি তীর্থংকর নাট্য গোষ্ঠী হতে মঞ্চায়িত আইয়ুব আলী এর নির্দেশনায় “ঘুনে ধরা সমাজ” এবং নাট্য সম্প্রদায় শিখড় হতে মঞ্চায়িত আহমেদ কবির রচিত ও মোস্তফা কামাল যাত্রা’র নির্দেশনায় “অবরোধ” নাটকে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।

১৯৯৭ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর ‘বীজন নাট্য গোষ্ঠী’ নামে পাহাড়তলীতে তিনি একটি থিয়েটার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই থিয়েটার গ্রুপের ‘দল প্রধান’ হিসেবে তিনি এখনো দক্ষতার সাথে দলের হাল ধরে আছেন। থিয়েটার গ্রুপ ‘বীজন নাট্য গোষ্ঠী’ তার নির্দেশনায় প্রথম পথনাটক ‘স্বাধীনতার পর’ মঞ্চস্থ করে। পরবর্তীতে তাঁর নির্দেশনায় অনেকগুলো পথনাটক দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চস্থ হয়।

তারমধ্যে বিজয় ৭১, দীপক চৌধুরী রচিত ‘শিখা চিরন্তন’, আহমেদ কবির রচিত ‘সোলাইমান বাদশার প্রার্থনা’, হিমেল ইসহাক নির্দেশিত ‘জারীসারী’ এবং তাঁর রচিত ‘টোকাই’ উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে ‘শিখা চিরন্তন’ নাটকটি ৫৪তম এবং সোলাইমান বাদশার প্রার্থনা ৩১তম মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রচিত এবং আলমগীর কবির শুভ ও তাঁর নির্দেশনায় বীজন নাট্য গোষ্ঠী হতে প্রথম মঞ্চনাটক “হাস্য লাস্য ভাষ্য” মঞ্চায়িত হয়।

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্র হতে প্রচারিত শেখ শওকত ইকবাল চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘বিবর্ণস্বপ্ন’ এবং আবু জাফর সিদ্দিকী প্রযোজিত ‘দিনরাত্রি’ নাটকে অভিনয় করেন। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বৈশাখী টেলিভিশনে কুয়াশা চৌধুরী প্রযোজিত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ এবং চ্যানেল আইতে আতিকুর রহমান পরিচালিত ‘জনজীবন’ নাটকে অভিনয় করেন।

মাহমুদ বাবু রচিত ও তাঁর পরিচালনায় নির্মিত খন্ডনাটক ‘আত্মগল্প’ অনল মিডিয়া ভিশন এর পরিবেশনায় বিজয় টিভিতে সম্প্রচারিত হয়।এছাড়া সম্প্রচার হয়েছে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেন এবং ফেইসবুক পেইজে তার অভিনীত খন্ডনাটক আবার কী হেরে গেলাম,তুমি কার,এমনি হয়, আত্মকথা,আশার আলো,এক রাতের অতিথি,সবই ভূল, অজানা, ফিরে দেখা, প্রতারণা, আলোরখোঁজে, হিয়োমিনিটি, অজানা, আশার আলো।

এছাড়াও সম্প্রতি দুইটি টেলিফিল্মে তিনি অভিনয় অভিনয় করেছেন। আশরাফুল করিম সৌরভের পরিচালনায় চট্টগ্রাম থেকে নির্মিত দুইটি টেলিফিল্ম “অতঃপর দু’জন”ও”জন্নাত”সম্প্রচার করা হয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি তে।এছাড়া অরিন্দম মুখার্জি বিংকু প্রযোজনা
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে এই প্রথম ৫২ পর্বের নাটক”খর কুঁটো আখ্যান”এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।

বিটিভি ঈদের টেলিফিল্ম দিগন্তের নিমন্ত্রণ, হারানো সুর পর পর অভিনয় করে তার অভিনয় দক্ষতা প্রকাশ করেন। বর্তমানে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বাংলাদেশের এই প্রথম মেগাসিরিয়াল “জলতরঙ্গ ” নাটক কাজ করেছেন।

এছাড়া গত বছর ১৫ আগষ্টের বিশেষ টেলিফিল্ম “প্রত্যাশা অন্তকাল..”এ অভিনয় করে অভিনয় যোগ্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন।ইতিমধ্যে বেশকিছু নাটক ও খন্ড নাটকে তারমধ্যে একটি আহত ফুলের গল্প, নোয়াখাইল্লা জামাই, দহন, মেঘের আড়ালে, কর্মঠ যুবক, মাদকের ছোবল, নারী পাচার, আমি এখন স্বালম্বী, ভালোবাসার অন্য রং উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া সচেতনতামূলক বেশকিছু নাটিকাতে তিনি নিয়মিত অভিনয় করছেন। তিন পর্বে ধারাবাহিক নাটক আরমান পারভেজ মুরাদ এর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নাটক সোনার পাহাড় এ একজন অভিনেতা হিসাবে নিজ দক্ষতা প্রকাশ করেছেন।এ ছাড়া চলচ্চিত্র দামপাড়া এবং হুইলচেয়ার ও সম্প্রতি মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা”রেড কয়েন”এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের সদস্য সৃজনশীল এই নাট্যকর্মীর নাটকে হাতেখড়ি বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমেদ কবির ও শেখ শওকত ইকবাল চৌধুরীর হাত ধরে। তিনি স্বপ্ন দেখেন,থিয়েটার তথা নাট্যচর্চা ও বিকাশের মধ্যে দিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার সমাজে আলো ছড়াতে প্রগতির মুক্তবার্তা পৌঁছে দিতে চান অন্তর থেকে অন্তরে।ইতিমধ্যে আমীনুল হক আমিন এর রচনা এবং তার নিজের নির্দেশনায় বীজনের ব্যানারে হাসির নাটক”চতুর ভোলা”চট্টগ্রাম এর বিভিন্ন মঞ্চে মঞ্চস্থ করেছেন।

এছাড়া তিনি অভিনয় ও মিডিয়া তে বিশেষ অবদানের জন্য চ্যানেল কৃষি এওয়ার্ড ২০২৩, ভোরের কাগজ উৎকর্ষ সন্মাননা ২০২৪, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পরিচালক ও শিল্পী সমিতি সন্মাননা, কালার্স একাডেমি সন্মাননা, আলোকিত সমাজ সেরা সংগঠক,একতা নাট্য সন্মাননা ২০১৭ পান।

পাহাড়তলী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সুস্থধারার প্রকাশনা ‘মাসিক চলমান পাহাড়তলী’র সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। আমরা তাঁর উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি, সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।