গুচ্ছে ভর্তিতে লাগে দেড় বছর, প্রাইভেটে দুই-তিন সেমিস্টার শেষ

গুচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের উপর এক্সপেরিমেন্ট চালানো হচ্ছে। যেখানে গুচ্ছে ভর্তি হতেই প্রায় দেড় বছরের মতো সময় লেগে যাচ্ছে সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই তিন সেমিস্টার শেষ হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অবিভাবকেরা ভাবছে ছয় সাত বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করার চাইতে একটু কষ্ট করে হলেও প্রাইভেটে সেটা চার বছরের মধ্যে শেষ করে ফেলা ভালো। পরিকল্পিতভাবেই এটি করা হচ্ছে। হয় তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাক বা উচ্চশিক্ষা বাদ দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাক।

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও আলাদা আলাদা পরীক্ষা না নিয়ে একটা পরীক্ষার মাধ্যমে নেয়। কিন্তু আমরা পরিপূর্ণ অবকাঠামো প্রস্তুত না করেই এ এক্সপেরিমেন্টে চলে গেছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নেই, এখনও শিক্ষার্থী ভর্তির সক্ষমতা তৈরি হয়নি তাদের নিয়ে এটা করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা সমুচিত নয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের উপর এক্সপেরিমেন্ট চালাতে আমি রাজি না। এজন্যই আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।

তিনি আরো বলেন, এজায়গায় সরকারকে পুনরায় ভাবতে হবে। পরিষ্কার একটা অবকাঠামো তৈরি হোক এটাকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। আমরা সরকারকে বলতে চাই যে প্রক্রিয়াটি এখনও সেভাবে হয়ে ওঠেনি। সুন্দর একটা অবকাঠামো তেরি হোক। ভালো হলে অবশ্যই আমরা সেটা গ্রহণ করবো।

এদিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৪ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেনীর ভর্তি প্রক্রিয়া প্রশ্নাতীত। সমন্বিত (গুচ্ছ) ভর্তি প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ ও নির্বিঘ্ন হবে সারাদেশের কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে দেখা যায়, সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা, দীর্ঘসূত্রিতা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে। এই প্রক্রিয়ার কারনে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সিন্ধান্ত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন না করার বিষয়টি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

সংবাদ সম্মোলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আমরা জেনেছি যে গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গুচ্ছভুক্ত উপাচার্যদের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আগামী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহন গ্রহণ করবে। সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে বলে আশ্বাস জানায় শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

আসলেই কি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থাকছে?

উত্তরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গুচ্ছ কমিটি প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে যে আগামী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহন গ্রহণ করবে। সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও আছে। আমরাও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি যে ইবি শিক্ষক সমিতির এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে চায় না।

এক্ষেত্রে ইবি উপাচার্যের অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা উপাচার্যের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছি তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে, শিক্ষকরা একাডেমিক কাউন্সিলে যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমি সে সিদ্ধান্তই যাবো।

এছাড়াও, সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের আরো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এসয়ম ইবি প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম রায়হান, ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শাহেদ আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক তাজমুল হক জায়িম সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বেলা ১১ টায় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল-মাসুদ, সদস্য অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ, ড. সাজ্জাদ হোসেন, এম. এম. নাসিমুজ্জামান, সাজ্জাদুর রহমান টিটু, ফিরোজ আল মামুন ও শহিদুল ইসলাম।