চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সিস্টেম

ইছামতী নদীর এই অংশ মৃতপপ্রয়। নামমাত্র পানিতে কয়েকটা নৌকা রয়েছে। রয়েছে কচুরিপানা। এরমধ্যেই নদীর তীরে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের বসতি। বাংলাদেশের পুটখালী সীমান্ত।
ওপাশেই ভারতের তেরোঘর এলাকা।

পুটখালী যশোরের শার্শা উপজেলার একটি সীমান্ত এলাকা।

শুধু পুটখালী সীমান্ত নয়, যশোর-সাতক্ষীরা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় এটি স্থাপন করা হচ্ছে।

কয়েক বছর আগেও এই সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসতো গরু। গরু পাচারে সতর্ক বিজিবি ও বিএসএফ।
গরু আসা বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি মাদক ও অন্যান্য চোরাই পণ্য। প্রতিদিনই বিপুল চোরাই পণ্য জব্দ করছে বিজিবি। চোরাই পণ্য জব্দ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে পুটখালী সীমান্তে স্থাপিত স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (এসবিএসএস)।

কয়েক বছর ধরে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওপারে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ফেন্সিডিলের কারখানা। বিভিন্ন কৌশলে তা সীমান্ত হয়ে প্রবেশ করে দেশে। ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম স্থাপনের পর থেকে ক্রমান্বয়ে ওই সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পণ্য ও মাদক আসা কমেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

২০১৮ সালের ৩০শে অক্টোবরে স্থাপন করা হয় স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (এসবিএসএস)। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন এর খুলনা ব্যাটালিয়ন ২১ বিজিবি’র পুটখালী বিওপিতে নয় কিলোমিটার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে এটি।

এসবিএসএস’র মাধ্যমে সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে বিজিবি। চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এটি কার্যকরী বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তারা।
একটি সার্ভার ও ৪৬.৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন প্রায় ১৫৩ ফিট টাওয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই সিস্টেম।

এই টাওয়ারে রয়েছে দু’টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরা। একটি লংরেঞ্জ ক্যামেরা অন্যটি থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা। থার্মাল ক্যামেরা রাতের অন্ধকারেও সক্রিয়। এই টাওয়ারে একটি ডিভাইস রয়েছে, সীমান্ত এলাকায় কেউ প্রবেশ করলেই সেখান থেকে সিগন্যাল আসে টাওয়ারে। ওই ডিভাইস তা গ্রহণ করে।

সীমান্তের শূন্য লাইনে নয় কিলোমিটার পর্যন্ত ১৯টি রিপিটার পোল স্থাপন করা রয়েছে। এটিকে দু’টি সেক্টরে বিভিক্ত করা হয়েছে। সেক্টর এ-তে নয়টি পোল, বি-তে ১০টি পোল। একেকটি থেকে অন্যটির দূরত্ব ৫শ’ মিটার। প্রতিটি পোলে দু’টি ডিভাইস রয়েছে। সোলার প্যানেলসহ, সেন্সর বিশিষ্ট ক্যাবলের মাধ্যমে এতে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পোলে আড়াই মিটার অন্তর অন্তর সেন্সর রয়েছে।

যখন কেউ এই সীমান্ত অতিক্রম করে তখন সেন্সর ক্যাবল কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পন ডিভাইস রিসিভ করে। শক্তিশালী সিগন্যালে পরিণত করে। এন্টেনার মাধ্যমে সিগন্যাল পাঠায় ওই টাওয়ারে। টাওয়ার থেকে তা পৌঁছায় সার্ভারে। তাৎক্ষণিকভাবে সার্ভার তখন ক্যামেরাকে ওই স্থান দেখাতে নির্দেশ করে। মুহূর্তের মধ্যেই তা ঘটে।

বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা মাত্রই টহল টিমকে ওই স্থানে পাঠানো হয়। অনেক ক্ষেত্রেই চোরাইপণ্য জব্দ করা সম্ভব হয়। কিন্তু চোরাকারবারে জড়িতদের আটক করা অসম্ভব হয়ে যায় ওই এলাকার জনবসতির কারণে।

খুলনা ব্যাটালিয়নের ২১ বিজিবি’র সহকারী পরিচালক তফছির আহমেদ বলেন, অবৈধ পণ্য জব্দ করতে, জড়িতদের আটক করতে বিজিবি ও এসবিএসএস’র ক্যামেরা সক্রিয়। কিন্তু সীমান্তে নদীরপারে দুই দেশের মানুষের বসতি হওয়ায় প্রায়ই টহল টিম পৌঁছার আগেই চোরাকারবারিরা বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নেয়। এমনকি এক মিনিটের মধ্যেই নদী পার হয়ে যায় চোরকারবারিরা।

বিজিবি পৌঁছার আগেই যদি চোরাইকারবারিরা বাড়িতে ঢুকে যায় তখন আর তাদের ধরা সম্ভব হয় না। এছাড়াও গাছের কারণে অনেক স্থানে ক্যামেরার দৃষ্টি পৌঁছাতে পারে না। তবে এসবিএসএস’র কারণে চোরাইপণ্য থেকে শুরু করে মাদক ও মানবপাচার ওই এলাকায় অনেক কমেছে বলে জানান তিনি।

বিজিবি জানিয়েছে, গত দুই বছরে ৫৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা মূল্যের ১৪ হাজার ৫৫ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। এরমধ্যে ২০২০ সালে জব্দ করা হয় ৫ হাজার ৭শ’ ২৪ বোতল ও ২০১৯ সালে জব্দ করা হয় ৮ হাজার ৩শ’ ৩১ বোতল ফেন্সিডিল। গত বছরে ওই সীমান্তে ২০ লাখ ১৩ হাজার ৭শ’ ৪০ টাকা মূল্যের চোরাইপণ্য জব্দ করেছে বিজিবি।

তার আগের বছর ৯০ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ’ ২ টাকা মূল্যের চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়। এছাড়াও ওই বছরে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে চারজন ও চোরাই কারবারে জড়িত থাকার দায়ে ১৪ জনকে আটক করা হয়।