নেত্রকোনার মদনে জোড়া তালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা

নেত্রকোনার মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আইসোলেশন ব্যবস্থা। মাত্র ৫জন রোগীর আইসোলেশন নিয়েই চলছে করোনা চিকিৎসা। ফলে করোনা মহামারির এই সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও চিকিৎসক ও জনবল সংকট, ওষুধ এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অভাবে কোন রকমে জোরা তালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা।

এদিকে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সেবা নেই বললেই চলে। দীর্ঘ দিন যাবত বাক্সবন্ধী থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এক্স্ররে মেশিন। কোন রকমে টেনে হিছড়ে চলছে দস্ত বিভাগ। অন্যান্য প্যাথলজি সেবাও রয়েছে বন্ধ। ফলে এ ধরনের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মদন উপজেলাসহ পার্শ্ববতী আটপাড়া উপজেলার কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবার। হাওরাঞ্চল এ উপজেলার দরিদ্র মানুষ বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেটে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামার্থ্য না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিক এ মৌলিক চাহিদা থেকে।

জানা যায় ২০০৭ সালে হাসপাতালটি ৩০ শষ্যা থেকে ৫০ শষ্যায় উন্নতি করণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালের মূল ভবনটি পুরনো হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছর যাবত ২০ শষ্যা নিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। তবে মূল ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়েই জরুরী বিভাগের কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে নানা সমস্যা-সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই যেন রোগী হয়ে পড়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০০ রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। চিকিৎসা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। এ উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার জন্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ঊনত্রিশ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কাগজে কলমে নয়জন চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে দুই জন আছেন প্রেষণে।

দীর্ঘদিন থেকে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ,জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন),জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) ,মেডিকেল অফিসার দুইজন ,জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট( চক্ষু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থো), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিও), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএন টিও)সহ ২০ জন্য ডাক্তারের পদ ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে নার্সিং সুপারভাইজার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫ জনের মধ্যে আছেন ১১ জন,৩জন প্রেষণে। ১১টি পদেই শূন্য রয়েছে।

এদিকে উপজেলায় একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রেও একজন করে নয়জন চিকিৎসা কর্মকর্তার (এমও) পদ রয়েছে । এর মধ্যে চারজন ডাক্তার ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকলেও হাসপাতালে ডাক্তার স্বপ্লতা ও স্থাপনা না থাকায় কাগজে কলমে ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকেও স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেই চিকিৎসা দিচ্ছেন তাঁরা। ফলে পাঁচটি পদেই রয়েছে শূন্য।

এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) চিকিৎসা সেবা না দেয়ার কারণে বর্তমানে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও সিএইচসিপিরাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসা হয়ে উঠেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র আরও জানায়, অবেদনবিদ ও জরুরী চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও তা অযতেœ পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে সেটা জরুরী প্রসূতি রোগীদের কোনো কাজে আসছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা পৌর কমান্ডার একে এম সামছুল হক খসরু অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে রোগীদের এক্স-রে করাতে হয় বাইরে থেকে। সামান্য রোগী হলেই চিকিৎসা না দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে দায়সারা গোছের কাজও করার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেক সময় উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তার ওপর নির্ভর করতে হয় রোগীদের। বিশেষ করে এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বেড সংকট চরম আকারে দাড়িঁয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ হাসানুল হোসেন এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি একাধিকবার লিখিতভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তিনি আরো বলেন, লোকবল কম থাকলেও আমরা আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ৩১ শয্যার একটি ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় হাসপাতালটি ১৯ শয্যা হয়ে পড়েছে। এর পরেও ওই ভবনের একটি কক্ষে জরুরী বিভাগ ঝুঁকিতে কাজ করছে। আশা করছি অচিরেই এর সমাধান পাব।

নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: সেলিম মিয়া বলেন, মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ভবন , চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তুাব পাঠিয়েছি। অচিরেই এর সমাধান হবে।