পটুয়াখালীতে অতি বৃষ্টিতে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে তরমুজ, ক্ষতি ১০ কোটি টাকা

অসময়ে অতি বৃষ্টিতে উপকূলজুড়ে এখন সব হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তরমুজ চাষিরা। কয়েকদফা টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আবাদী তরমুজের ক্ষেত। এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়ায় গ্রামীন সড়কগুলো দিয়ে পরিবহন যাতায়াত প্রতিবন্ধকতায় পানির নিচেই ডুবে আছে কষ্টার্জিত কৃষকের স্বপ্নের পরিপক্ক ফসল।

ফলে দক্ষিণের তরমুজ চাষি কৃষাণ কৃষাণিদের ঘরে চলছে এখন কান্নার রোল। আর কৃষি বিভাগ বলছে, অসময়ের বৃষ্টির প্রভাবে তরমুজ চাষে ক্ষতির সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি টাকা।
রমজানের শুরুতে প্রকৃতিতে চোখ রাঙানো মেঘের গর্জন থাকলেও তেমন বর্ষনের শঙ্কায় ছিলেন না মৌসুমি তরমুজ চাষিরা।

তবে ৭ রমজান থেকে থেমে থেমে বয়ে চলা কয়েক দফা অসময়ের বৃষ্টির প্রভাবে মিলান হয়ে গেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাষিদের স্বপ্ন। লাভের আশা বাদ দিয়ে এখন উৎপাদন খরচ বাঁচানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। হঠাৎই এমন বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে চিন্তার ভাজ পড়েছে এখন উৎপাদনকারীদের কপালে। তারা বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরের উৎসব হবে না শতাধিক চাষিদের ঘরে। উপজেলার চম্পাপুর ইউপির তরমুজ চাষি আমির হাওলাদার জানান, ধার দেনা করে ৪ লাখ টাকা উৎপাদন ব্যয়ে সাড়ে পাচ একর জমিতে বিটফ্যামিলি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন তিনি।

এর মধ্যে রমজানের শুরুতে ভালো দাম পাওয়ায় ট্রাকযোগে ঢাকায় পাঠিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। তবে হঠাৎই অসময়ের বৃষ্টিতে তার প্রায় তির একর জমির তরমুজ ক্ষেত পানির নিচে ডুবে গেছে। চলতি সপ্তাহে তিন পাইকারের কাছে তরমুজ বিক্রির কথা ছিল তার। এখন গত তিনদিন যাবৎ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় কাচা মাটির রাস্তায় পরিবহন যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্ষেতেই এখন পচে যাচ্ছে তার ঘাম ঝড়ানো স্বপ্নের ফসল।

তিনি বলেন, অনেক বদলার শ্রমের টাকা এখনো অনেক বাকি রয়েছে। কিভাবে পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। সব তরমুজ বিক্রি হলে অন্তত ৩ লাখ টাকার লাভ হতো বলেও জানান এই চাষি। এদিকে একই ইউপির দেবপুর গ্রামের চাষি সলেমান বলেন, এক ভাগিদার নিয়ে ৯ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ৬ লাখ টাকার ফসল বিক্রি করতে পারলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে সব হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তারা দুজন। তিনি বলেন, কাচা মাটির রাস্তায় কোন পরিবহন ঢুকছে না। ফলে ক্ষেতে পানির নিচে তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর স্থানীয় বাজারের কিছু পাইকার থাকলেও তারা দাম হাকাচ্ছেন পানির দরে। তার ক্ষেতের তরমুজ রমজান মাসজুড়ে বিক্রির জন্য পরিচর্যা করছিলেন তিনি। এখন কি করবেন বলে ভাষা হারিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, এবছর ২শ’ ১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন চাষিরা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে চম্পাপুর ইউপিতে। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে চাষিরা লোকশানের মুখে পড়েছেন। চাষিদের ক্ষেতে প্রায় অর্ধেক পরিপক্ক ফসল এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। যা রমজান মাসজুড়ে বাজারজাত করতেন তারা। সবচেয়ে বড় সমস্যা পরিবহন যাতায়াত বন্ধ থাকায় তরমুজ বাজারজাত করা যাচ্ছে না। অনেক কৃষক তরমুজ তুলে ক্ষেতের পাশেই স্তুপ করে রেখেছেন। কিন্তু বিক্রি করতে পারছেন না। এতে এই উপজেলায় তরমুজ চাষে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হতে পারে বলে জানান তিনি।