বিয়ের ভয়ে যুবলীগ নেতা উধাও, প্রেমিকার আমরণ অনশন

বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে আমরণ অনশনের তৃতীয় দিন পার করছেন প্রেমিকা কলেজছাত্রী পারুল। প্রেমিক যুবলীগ নেতা শাকিল প্রেমিকাকে রেখে বাড়ি ছেড়ে উধাও।

ঘটনা টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কবার উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রেমিকপক্ষের অসহযোগিতায় তা সফল হয়নি।

ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্য শাকিল রানা সচিব ফুলকি পশ্চিমপাড়ার মাসুদ রানা মান্নানের ছেলে। ফেসবুকের মাধ্যমে আড়াই বছর আগে সখীপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান মাস্টারের মেয়ে পারুল আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পারুল করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পর্বের ছাত্রী। বছর খানেক আগে তাদের সরাসরি সাক্ষাতের পর প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

একপর্যায়ে শাকিল তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডেটিংয়ে নিয়ে যায় বলে দাবি পারুলের। এর ধারাবাহিকতায় শাকিল তাকে দ্রুত বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রীর পরিচয়ে ঢাকার আবাসিক হোটেলে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার দৈহিক মেলামেশা হয় তাদের মধ্যে।

সর্বশেষ ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি শাকিল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে জানিয়ে পারুল বলেন, এসব ঘটনার প্রমাণাদি তার কাছে আছে।

পারুল অভিযোগ করে বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাকে বিয়ে করার কথা বললে শাকিল তা অস্বীকার করেন। শাকিলের এমন প্রতারণামূলক আচরণে গত ৮ মে (সোমবার) সকাল সাতটার দিকে শাকিলের বাড়িতে অবস্থান নিতে বাধ্য হন বলে জানান পারুল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন শাকিলের সঙ্গে পারুলের কিছু সময় কথা হয়। এরপর হঠাৎ শাকিল মেয়েটিকে রেখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। তখন মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে শাকিলের স্বজনরা তাকে বুঝিয়ে তার অভিভাবকদের আনতে বলে।

দুপুরের পর পারুলের অভিভাবকরা ঘটনাস্থলে হাজির হলেও শাকিল ও তার কোনো নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হাজির হননি। পরে ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল ৯ মে (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় উভয় পক্ষের অভিভাবকদের ঘটনাস্থলে হাজির হতে বলেন। পারুলের লোকজন উপস্থিত থাকলেও শাকিল ও তার পক্ষের লোকজন না থাকায় ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি।

শাকিলের সঙ্গে বিয়ে না হলে তার মুখ দেখানোর উপায় নেই বলে জানান অনশনরত তরুণী পারুল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শাকিল আমার সবকিছু লুটে নিয়েছে। সে আমাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোনো পথ থাকবে না।’

কিন্তু শাকিল তাকে (পারুল) বিয়ে করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। শাকিলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, ‘মাত্র তিন মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পারুলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। প্রেমের মতো কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি।’ শাকিলের দাবি, ‘কোনো একটি চক্র হয়তো আমাকে ফাঁসানোর জন্য মেয়েটিকে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছে।’

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাটি সমাধানের কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। প্রশাসনিকভাবেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা ঘটনাটি দ্রুত সমাধান না হলে যেকোনো মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।