মহান মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণা জেলার প্রথম শহীদ জীবন কৃষ্ণ সরকার

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মহান স্বাধীনতা ‍যুদ্ধে সার্চ লাইট অপারেশন পরিচালনা করে নৃশংস হত্যাকান্ডের সূচনা করে পাকিস্থানী হানারদার বাহিনী। এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। যদিও অপারেশন রাত ১১টায় শুরু হবার কথা ছিল কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা ১১.৩০ টায় ঢাকা সেনানিবাস থেকে বের হয় কারণ পাকিস্তানি ফিল্ড কমান্ডার চাইছিলেন যে বাঙালি সৈন্যরা যাতে প্রতিক্রিয়া করার কোন সুযোগ না পায়। সেনা বাহিনীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৬ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ‍

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা শুরু করে রাত ১২ টার পর।যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জনপ্রিয় লেখক ও গবেষক প্রমোদ রঞ্জন সরকার তার একটি লেখার সূত্র ধরেই আজকের এই লিখা। তিনি লিখেছেন ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা চালানোর সময় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নেত্রকোণা জেলার দুজন। একজনকে মধ্যরাতে গুলি করে হত্যা করে তিনি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র শহীদ জীবন কৃষ্ণ সরকার। অন্যজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শহীদ ড. ফজলুর রহমান ফজলুর রহমান খান। উনার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কজিযাটি গ্রামে।

শহীদ জীবন কৃষ্ণ সৱকাৱ এর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কুলপতাক গ্রামে। পিতা যতীন্দ্ৰ চন্দ্ৰ সৱকাৱ। দুই ভাই এক বোন। ভাইদেৱ মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ । জীবন কৃষ্ণ সৱকাৱেৱ জন্ম ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়। নিজ গ্ৰামেৱ সৱকাৱী প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্ৰহণ শেষে শালদীঘা গোপাল গোপীনাথ জুনিয়ৱ হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্ৰেণীতে ভৰ্তি হয়ে সপ্তম শ্ৰেণী পৰ্যন্ত ঐ স্কুলে লেখা পড়া কৱেন। এৱপৱ মোহনগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলে অষ্টম শ্ৰেণীতে ভৰ্তি হয়ে বৃত্তি পৱীক্ষা দিয়ে মেধা বৃত্তি লাভ কৱেন। তিনি বৱাবৱেই ছিলেন অসম্ভব মেধাবী।গ্রামর তৎকালীন সম্ভ্রান্তজন রাজেন্দ্র কিশোর সরকার ছিলেন সম্পর্কে ছিলেন জীবন কৃষ্ণ সরকার এর দাদা। তার কাছ থেকেই সার্বক্ষনিক ইনস্পায়ার হতেন।

১৯৬৪ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্ৰিকুলেশন পৱীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে লেটাৱসহ প্ৰথম বিভাগে ষ্টাৱ মাৰ্ক পেয়ে মেট্ৰিক পাশ কৱেন। ঐ বছৱ তাৱঁ ৱেজাল্ট টি ছিল ঐ স্কুলেৱ সৰ্বোচ্চ ৱেজাল্ট। এৱপৱ তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ভৰ্তি হন। সেখানে ও কৃতিত্বপৃৰ্ণ ফলাফল নিয়ে ( প্ৰথম বিভাগ) ইন্টাৱমিডিয়েট পাশ কৱেন। অতপৱ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৱসায়ন শাস্ত্ৰে অনাৰ্সে ভৰ্তি হন। অনাৰ্স ফাইনাল পৱীক্ষায় ও তাৱঁ চমকপ্ৰদ ফলাফল ছিল।

শহীদ জীবন কৃষ্ণ সৱকাৱ শুধু একজন মেধাবী ছাত্ৰই ছিলেন না। ছিলেন সৎ চৱিত্ৰবান বিনয়ী খুবই মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ধীৱ স্হিৱ ঠান্ডা প্ৰকৃতিৱ একজন শান্ত মানুষ। নম্ৰতা,বিনয় ভদ্ৰতা সৎ চৱিত্ৰবান সহ একজন মানুষেৱ যত সব ভাল গুনাগুণ আছে তাৱঁ প্ৰায় সব গুণ তাৱঁ মধ্যে ছিল। তিনি ছিলেন বিকাশমান মেধা মনন অগ্ৰসৱ চিন্তা চেতনাৱ অধিকাৱী। সদা হাসিখুশি থাকতেন। নিজে খেলাধুলা কৱতেন না তবে খুবেই ক্রীড়ামোদী ছিলেন। গ্ৰামেৱ ফুটবল টীমেৱ সব খেলায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে উপস্থিত থাকতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েৱ অধ্যাপক ৱতনলাল চক্রবৰ্তীৱ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গনহত্যা বইটিতে বিশ্ববিদ্যালয়েৱ সকল শহীদেৱ তালিকা উপস্থাপন করেন। সেখানে ছবিসহ শহীদ জীবন কৃষ্ণ সরকার এর নাম উপস্থাপন করেছেন। তাছাড়া জগন্নাথ হলে শহীদরে তালিকায়তেও তার নাম রয়েছে। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক থাকলেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার কোন কমতি নেই মানুষের। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ পরিবারকে কোন প্রকার পৃষ্টপোষকতা দেয় হয় না। শহীদ জীবন কৃষ্ণ সরকার এর বড় ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র সরকার জানান একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেকে কিছু কাগজ ও শহীদ জীবন কৃষ্ণ সরকার নামে একটি শহীদ স্বীকৃতি ক্রেস্ট দেয়া হয়েছিল এছাড়া আর কোন খবরাখবর নেয়া হয়নি।তিনিও শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য বার্ধক্যজনীত কারনে যেকোন সময় জীবনাবসান হবে। শহীদ পরিবারের স্বীকৃতিটুকু অন্তত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেতে চান বলে শেষ দাবি জানান তিনি।