মেসি একাই আর্জেন্টিনা দলের অর্ধেক!

বিশ্বকাপে বাকি ৩১ দলের মতো আর্জেন্টিনা দলেও স্বপ্ন-সারথি ২৩ জন। প্রতিভা-দক্ষতা-সামর্থে সেই ২৩ জনই কি সমান? মোটেই না। সবাই সমান তো নয়-ই। অধিনায়ক লিওনেল মেসি একাই বাকি ২২ জনের সমান! সাধারণ কোন মেসি-ভক্ত নন, মহামূল্যবান এই রায় দিয়েছেন ডাচ কিংবদন্তি প্যাট্রিক ক্লাইভার্ট। মেসির প্রশংসা করে বার্সেলোনার সাবেক এই ডাচ তারকা বলেছেন, মেসি এই আর্জেন্টিনা দলের ৫০ শতাংশ। মানে দলের বাকি ২২ মিলে যতটা শক্তিমান, মেসি একাই তাদের সমান!

কদিন আগে নেইমারকে নিয়ে ঠিক এই কথাটাই বলেছেন ব্রাজিলের ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী তারকা দাদা মারাভিলাহ। ফুটবল দুনিয়ায় যিনি দাদা নামেই বেশি পরিচিত। ৭২ বছর বয়সী দাদা স্পষ্ট করেই বলেন, ‘নেইমার এই ব্রাজিল দলের ৫ শতাংশ।’ ৪১ বছর বয়সী ক্লাইভার্ট নেইমারকে নিয়ে দাদার সেই প্রশংসাবাণী শুনেছিলেন কিনা কে জানে!

মেসিকে প্রশংসায় ভাসাতে ঠিক দাদার মন্তব্যটাই হুবহু ধার করলেন তিনি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিদায়ঘণ্টা বাজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন এই ক্লাইভার্ট। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই সেমিফাইনালে উঠে যায় ক্লাইভার্টদের হল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস)। ম্যাচে হল্যান্ডের ২-১ গোলের জয়ের পথে দলের প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনিই।

এরপরও বিশ্বকাপে একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা-হল্যান্ড। গত ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা ক্লাইভার্টের দেশ হল্যান্ডের স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পা রাখে মেসির আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৩ মিনিটেও গোলশূন্য ড্র থাকে ম্যাচ। পরে টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালের হাসি হাসেন মেসিরা। ৪ বছরের আগের ওই ক্ষত হিসেবে এবার মেসিদের সর্বনাশই কামনা করার কথা ক্লাইভার্টের। কিন্তু না, ডাচ কিংবদন্তি বরং আর্জেন্টিনার জন্য শুভ কামনাই জানাচ্ছেন। এবং সেটা যথারীতি মেসির কারণেই। মেসির মতো একজন মহাতারকা বিশ্বকাপ জিতলে সেটা যে একজন ফুটবলার হিসেবে ক্লাইভার্টের জন্যও হবে স্বস্তির।

ক্লাইভার্টের দেশ হল্যান্ড এবার বিশ্বকাপে জায়গাই করে নিতে পারেনি। ফলে অন্য দেশকে সমর্থন দিয়েই বেড়াতে হবে তাকে। মেসির কারণে তার সমর্থন পাবে আর্জেন্টিনাও। সেই সমর্থনটা তিনি এরই মধ্যে জানাতে শুরু করেছেন। মেসির প্রশংসা করতে গিয়ে সতর্কও করে দিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। আর্জেন্টিনা দলের অন্য খেলোয়াড়দের প্রতি প্রকারান্তরে আহ্বান জানিয়েছেন, মাঠে মেসিকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার। বলেছেন, মেসিকে যোগ্য সহায়তা দিতে পারলেই আর্জেন্টিনা এগিয়ে যেতে পারবে অনেক দূর।

আর্জেন্টাইন পত্রিকা ওলে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাইভার্ট স্পষ্ট কণ্ঠেই বলেছেন, ‘ক্লাব বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দল, দুক্ষেত্রেই মেসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমি মনে করি, সে একাই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ৫ শতাংশ। আমি বলছি না যে, তার একার উপরই সব কিছু নির্ভর করবে। তবে নিজের ভালো দিনটিতে একাই সবকিছু করার ক্ষমতা বা সামর্থ তার আছে। প্রয়োজন শুধু যোগ্য সহায়তা। যেমনটা সে বার্সেলোনায় পায়।’

ক্লাইভার্টের কথা মেসির দিনে জয় নিয়ে আর্জেন্টিনাকে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু মাঠে যে দিনটি তার খারাপ যাবে? ক্লাইভার্টের শঙ্কাটা সেখানেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি টেনেছেন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার দুরাবস্থার কথা। বাছাইপর্বে টানা কয়েকটা ম্যাচ খারাপ যায় মেসির। গোল করতে পারছিলেন না। মেসির ব্যর্থতার সেই ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টিনাও জিততে পারেনি। ফলে বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া নিয়েই শঙ্কা জেগেছিল। সেই শঙ্কা দূর করে আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপে তুলেছেন মেসিই। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচটিকে অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিক করে দলকে এনে দেন বিশ্বকাপের টিকিট।

এখন প্রশ্ন হলো রাশিয়া বিশ্বকাপেও যদি মেসির একটি খারাপ দিন আসে, তখন? সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে ক্লাইভার্ট বলেছেন, ‘অবশ্যই সেও মানুষ। একদিন সে ঘুম থেকে উঠে স্বস্তিবোধ নাও করতে পারে। সত্যি বলছি, রাশিয়ায় তেমন কিছু হলে আর্জেন্টিনার জন্য পরিস্থিতিটা জটিল হয়ে যাবে! বাছাই পর্বের কথাই ধরুন। বেশ কিছু ম্যাচেই সে সেরারূপে ছিল না। সেই ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টিনাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে মেসি একাই যে একটা ম্যাচের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারেন, বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচটিই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।’

ক্লাইভর্টের তাই কথা, মেসি একা না হয় ৫০ শতাংশ দিলেন। কিন্তু বাকি ২২ জন মিলে তো বাকি ৫০ শতাংশ দিতে হবে! বাকিরা তা পারবেন তো?

ক্লাইভার্ট এমন দিনে মেসি স্তূতি গাইলেন, বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপার মিশন নিয়ে ঠিক সেদিনই রাশিয়ায় পা রাখলেন মেসিরা। উল্লেখ্য, বার্সেলোনায় ১ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প শেষ করে গতকাল শনিবার রাতেই রাশিয়ায় পা রেখেছে আর্জেন্টিনা দল।