১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায়

রবি’র সেই শিক্ষককের বিরুদ্ধে আদেশ : ৩ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রমে বিরত

১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে নির্দিষ্ট ৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ অন্যান্য যাবতীয় একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার শাস্তিমূলক নির্দেশ সম্বলিত এক অফিস আদেশ জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার বিসিক বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্বপদে বহাল রেখে এ অফিস আদেশ টাঙিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী এ অফিস আদেশ জারি করেছেন।

ওই অফিস আদেশ স‚ত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই ৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ অন্যান্য যাবতীয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ও অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী শামীম জানান, ‘তাদের সকল শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে বিরত রেখে কর্তৃপক্ষ অফিস আদেশ জারি করায় এ বিষয়ে আপাতত নতুন করে কোন আন্দোলনে যাচ্ছেন না তারা।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হলে প্রবেশের সময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ১ম বর্ষের ছাত্র নাজমুল লজ্জায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিষয়টি সবার সামনে আসে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দায়িত্বরত ৩ পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এরপর, ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি এ ঘটনা তদন্ত শেষ করে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ২১ অক্টোবর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলীর কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।এর পরদিন বিকেলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার ধানমন্ডিস্থ আবাসন ভবন অফিসে এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিদ্ধান্ত ছাড়াই এদিন রাতে সিন্ডিকেট সভা শেষ হয়। এ খবর জানতে পেরে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে ২২ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন ও আমরণ অনশন শুরু কওে শিক্ষার্থীরা।
এ আন্দোলন চলমান থাকাবস্থায় ২৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে শামীম হাসান (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির প্রধানসহ ৩৩ জন শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১১ ঘণ্টা অবরূদ্ধ করে রাখে। গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহার মধ্যস্ততায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে নির্দিষ্ট ৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ অন্যান্য যাবতীয় একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার শাস্তিমূলক নির্দেশ সম্বলিত অফিস আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।