রাণীনগরে কৃষি জমিতে পুকুর খননের ধুম

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ী স্থানীয় কৃষকদের ধানী জমি চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক বুনিয়ে দেওয়ার লোভনী অফার দিয়ে ১০ বছর মেয়াদী লীজ প্রক্রিয়া চালু করে জমির মালিককে বোকা বানিয়ে ধোকা দিয়ে কৃষি জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে পুকুর খননের ধুম পড়েছে। দিন-রাত বিরতিহীন ভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার ইট ভাটাতে চরা দামে মাটি সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের পৈতিক কৃষি জমি অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণীর তথাকথিত পুকুর ও মাটি ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে এখানে জমি লীজ নিয়ে কৃষি জমিতে পুকুর কেটে ইট ভাটার মালিকদের সাথে মাটি ব্যবসা করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা চাষীরা জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান লাগাতে গিয়ে পানি সরবারহের নালা গুলো বন্ধ হওয়ার আশংকায় সহ জলাবদ্ধতার কারণে সদ্য রোপণকৃত বোরো ধান নিয়ে আতংকে রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভূক্ত জমি গুলোও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষিজাত জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পূর্ণের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থাণীয় এক শ্রেণীর কৃষকরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে ১০ বছরের জন্য লীজ প্রক্রিয়া চুক্তিনামা করে চাষযোগ্য ফসলী জমিতে বড় পুকুর করছে আর সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) সাতশত থেকে আটশত টাকায় বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রয় করছে পুকুর ব্যবসায়ীরা। জমি গুলো দেখে মনে হচ্ছে এযেন উম্মুক্ত জলাশয়। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে আবাদী কৃষি জমিতে অবাদে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি অন্য দিকে পাশের জমির মালিকরা পুকুর পাড়ের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক ভাবে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বোরো ধান রোপণে অনেক কৃষকরা বাধগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছে পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছে। এতে করে শুধু চলতি মৌসুমেই প্রায় সাতশত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবদি প্রায় নয়টি স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় পৌছে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবনতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপি’র আয়াপুর, হামিদপুর ও আতাইকুলা মৌজার এক নাম্বার ও তিন নাম্বার ¯øুইচ গেট নামক স্থানে পুকুর খননের প্রবনতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় বিল ও মৎস্য ও শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বিলমুনসুর এখন পুকুর দস্যুদের কবলে পড়ে দিনদিন ধান উৎপাদনের মাত্রা কমে যাওয়া সহ তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এপর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বিঘার বেশি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাবে রাণীনগর থানাপুলিশ চাষিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুকুর খনন বন্ধের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পুকুর খনন দস্যুরা তা আমলে না নিয়ে বরং বীরদর্পে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলার মেরিয়া গ্রামের পুকুর খনন দলের মূলহোতা শহিদুল ইসলাম জানান, আমার নিজস্ব সাত বিঘা কৃষি জমি সহ পার্শ্ববর্তী কৃষকদের আরো ২৬ বিঘা জমি লীজ নিয়ে পুকুর খনন করছি। এছাড়াও একই এলাকার হামিদপুর গ্রামের কালাম, মইন হোসেন, আত্রাই উপজেলার নন্দনালী গ্রামের বেলাল সহ আরোও বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুকুর খননের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

মিরাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো: আলম হোসেন জানান, পুকুর ব্যবসায়ীদের কাছে আমার এলাকার চাষিরা দিনদিন অসহায় হয়ে পড়ছে। বিলের মধ্যে পুকুর খনন করে উঁচু বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি পথ বন্ধ হওয়ার আশংকায় পুকুরের পার্শ্বে চাষিরা অনেকটা বাধ্য হয়েই ধান না লাগিয়ে পুকুর দস্যুদের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। ফলে একদিকে উৎপাদন কমছে অন্যদিকে বিলমুনসুরের সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। তার দাবি প্রশাসন যেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, অবাদে পুকুর খননের কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। ফলে আগামী দিনে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও দিনদিন কমে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, মিরাট ইউনিয়নের তিন নং ¯øুইচ গেট এলাকায় ধানী জমি পুকুর খনন করছে এমন বিষয় আমার জানা নেই। তবে সরকারী অনুমোদন ছাড়া যদি কেউ পুকুর খনন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।