সেন্টমার্টিন যাচ্ছে পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) একটি পর্যটকবাহী জাহাজকে পর্যটক পরিবহনের পাশাপাশি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে জাহাজ চলাচল শুরুর খবরে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকরা ভিড় করছেন টিকিট কাউন্টারগুলোতে। আর ধারাবাহিকভাবে আগামী কয়েকদিনে আরও ৫টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কায় দুর্ঘটনা এড়াতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ওই সময় এ রুটে ৭টি জাহাজ চলাচল করেছিল। এর মধ্যে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে সেন্টমার্টিনে পর্যটক ওঠানামার জেটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে জেটি মেরামত করা হয়েছে।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এবার জেটি সংস্কারের কারণে তা দেরিতে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন হিসেবে মঙ্গলবার একটি পর্যটকবাহী জাহাজকে পর্যটক পরিবহনের পাশাপাশি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। জাহাজ চলাচল শুরুর খবরে টিকিট কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছে পর্যটকরা।

কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেডের অফিসের সামনে টিকিট করতে আসা পর্যটক ইয়ামিন বলেন, অনেক আগে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজ চলাচল না করায় যাওয়া হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে জাহাজ চলাচল শুরুর খবরে টিকিট নিতে কাউন্টারে আসলাম। বিশেষ করে, আমার মেয়ের দ্বীপে যাওয়া স্বপ্নটা পূরণ হবে।

আরেক পর্যটক ইলিয়াছ বলেন, জাহাজ চলাচলের খবরে খুবই খুশি হলাম। দ্রুত এসে টিকিট করলাম, মঙ্গলবারই সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে দুই দিন থেকে আবারও কক্সবাজার চলে আসব। তারপর ঢাকায় রওনা হব।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি ও নানা সমস্যায় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় লোকসানে পড়তে হয় ট্যুর অপারেটরদের। কিন্তু প্রশাসন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় তারাও দারুণ খুশি।

ট্র্যাভেল টিউনের পরিচালক বেলাল উদ্দিন ভুট্টো বলেন, করোনা ও নানা সমস্যায় কক্সবাজারের ৫ শতাধিক ট্যুর অপারেটরদের লোকসানে দিন যাচ্ছে। কিন্তু টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচলে স্বস্তি ফিরেছে। এখন অন্ততপক্ষে ট্যুর অপারেটরদের কষ্টটা লাঘব হবে।

কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কক্সবাজার অফিসের কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসকের ছাড়পত্র পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু করবে। যদিও এর আগে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন দপ্তরের ছাড়পত্র পায়। এখন থেকে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আগ্রহীরা জাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে মঙ্গলবারের সব টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকরা আসলেও আর টিকিট দিতে পারছি না।

আর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ধারাবাহিকভাবে সব জাহাজকে পর্যটকে পরিবহনে অনুমতি দেওয়া হবে।

কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও জেটির মেরামত কাজ পর্যবেক্ষণ করার পরে পর্যায়ক্রমে অবস্থা বুঝে অপরাপর জাহাজগুলোকে অনুমতি দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব জাহাজকে চলাচলের পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হবে।

মো. আবু সুফিয়ান আরও বলেন, চলাচলকারী জাহাজগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত বিষয়টি তদারকি করবে। যদি কেউ বিধিনিষেধ না মানে তাহলে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিকে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, কিছুটা বিলম্বের মাধ্যমে এবারের পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা তাদের আবাসিক হোটেল ও কটেজগুলো সাজিয়ে রাখছেন। জাহাজ চলাচলের খবরে দ্বীপের মানুষের পাশাপাশি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এতে এখানকার সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।