সাতক্ষীরায় ধর্ষণের পর হত্যা, প্রেমিক ভারতে পালানোর সময় গ্রেফতার
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট এলাকার পূর্ণিমা দাস ধর্ষণ হত্যাকান্ডের আসামি পার্থ মন্ডলকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী সীমান্ত থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়।
এবিষয় রবিবার বেলা ১২ টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যলয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ২৪ তারিখ সকাল অনুমান ৬টার সময় দেবহাটা থানাধীন টিকেট গ্রামস্থ তারক বাবুর পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়ীতে স্থানীয়রা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশের সংবাদ দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সজীব খান এর নেতৃত্বে ও জেলা গােয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ইয়াছিন আলম চৌধুরী এর সম্বন্বয়ে একটি চৌকস টিম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন শুরু করে এজাহার নামীয় একমাত্র আসামী দেবহাটার টিকেট এলাকার শিবু মন্ডলের ছেলে পার্থ মন্ডল (২১) কে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে বৈকারী সিমান্ত থেকে আটক হয়।’
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামী পার্থ মন্ডল স্বীকারােক্তিকালে জানান- গাভা একেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়াশুনাকালে ভিকটিম পূনিমা দাস ও আসামী পার্থ মন্ডল এর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ৩ বছর ধরে প্রেম ছিল।
বর্তমানে ভিকটিম পূর্নিমা দাস দশম শ্রেণীর ছাত্রী এবং আসামী পার্থ মন্ডল এসএসসি পাশ করে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ প্যারামেডিক্যালে ২য় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।
গত ৪ মাস পূর্বে তাদের প্রেমের সম্পর্ক উভয় পরিবারের সাথে জানাজানি হয়ে গেলে উভয় পরিবার তাদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আসামী পার্থ মন্ডল বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে যায়।
আসামী অসুস্থ্য থাকাকালীন তার প্রেমিকা পুর্নিমা দাস আসামীর কোন খোঁজ-খবর না নিয়ে তাকে এড়িয়ে চলে এবং পরবর্তীতে এলাকায় এবং এলাকার বাহিরে একাধিক ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ায়।
এধরনের সংবাদ আসামীর কানে আসলে আসামী পার্থ মন্ডল ভিকটিম পূর্নিমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং মনে মনে পরিকল্পনা করে সে পূর্নিমাকে না পেলে অন্য কাউকে তাকে পেতে দিবে না।
সুযােগ বুঝে আসামী ভিকটিম পূনিমাকে হত্যা করবে। হত্যা সংঘটনের ১ থেকে দেড় মাস পূর্ব হতে মােবাইল ফোনের কথােপকথনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে আবার সখ্যতা তৈরী হয়।
তিনি আরো বলেন, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৪ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় দেবহাটা থানাধীন টিকেট গ্রামস্থ তারক বাবুর পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়ীতে ভিকটিম পূর্নিমা দাস আসামী পার্থ মন্ডল এর সাথে দেখা করে। ঘটনাস্থলে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আসামী তার কাছে থাকা কালাে ক্যাবল তার দিয়ে ভিকটিমের গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে শ্বাসরােধ করে অচেতন করে মাটিতে ফেলে দেয় এবং পরবর্তীতে ভিকটিমকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে ভিকটিমের শরীরে বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে ক্ষত – বিক্ষত করে সর্বশেষ তার হাত দিয়ে গলার টুটি চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হত্যা’র পর দ্রুত সাতক্ষীরা শহরে সাইকেলযোগে পালিয়ে চলে এসে শহরের বড় বাজারস্থ প্রান সায়ের খালে তার ব্যবহৃত মােবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে রাতে পুরাতন সাতক্ষীরার এলাকায় বসুন্ধরা ম্যাচে অবস্থান করে।
পরেরদিন ভােরে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছােটাছুটি করে বৈকারী সীমান্ত থেকে ভারতে যাওয়ার সয়ম আটক হয়।
আসামীর স্বীকারােক্তি অনুযায়ী হত্যাকাজে ব্যবহৃত ক্যাবল ও তার সাইকেল উদ্বার করা হয়। তার ব্যবহৃত মােবাইল ফোনটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার দেবহাটায় দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে (১৬) এসএসএম করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার প্রেমিক আসামী পার্থ মন্ডলকে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খানের নেতৃত্বে সদর উপজেলার কাথন্ডা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত পূর্ণিমা দাসের বাবা টিকেট গ্রামের শান্তি দাস বাদী হয়ে পূর্ণিমার প্রেমিক একই এলাকার শিবপদ মন্ডলের ছেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী পার্থ মন্ডলকে একমাত্র আসামি করে দেবহাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১১।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার একমাত্র আসামি পার্থ মন্ডলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবহাটা থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) ফরিদ আহমেদ।
এদিকে স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা হত্যার ঘটনায় খুনি পার্থ মন্ডলের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে দেবহাটা উপজেলার গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শত শত এলাকাবাসী। রবিবার সকাল ১১টার সময় সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন