ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে প্রাথমিক শিক্ষিকার চর-থাপ্পড় মারার অভিযোগ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারেছা আক্তার আঁখিকে খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফারিয়া আক্তার পিংকির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গৌরীপুর-বেখৈরহাটি আঞ্চলিক সড়কের দাড়িয়াপুর নামক স্থানে।

এ ঘটনায় সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও গৌরীপুর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

ঘটনার বিষয়ে সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারেছা আক্তার আঁখি জানান, ঘটনার দিন সকালে গৌরীপুর থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে পিংকি অটোরিক্সায় উঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর বসতে সমস্যা হওয়ার কথা বললে তিনি রেগে গিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারেন।

পাশাপাশি অটোরিক্সায় বসে থাকা এক যুবককেও উপর্যুপরি থাপড়াতে থাকেন এবং ডক্টর এম.আর করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র এক শিক্ষকের সাথেও বাজে ব্যবহার করেন। এই ঘটনার আমি বিচার দাবি করছি।
অটোরিক্সায় থাকা পথিক হাসান প্রান্ত বলেন, আমি অটোরিক্সায় বসে মোবাইলে গেম খেলছিলাম।

হঠাৎ ফারিয়া আক্তার পিংকি ম্যাডাম আমাকে থাপ্পড় মারেন। আমি এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। আমি উনার দিকে থাকালে তিনি আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। কেন জিজ্ঞেস করায় তিনি দ্বিতীয়বার আমার গালে থাপ্পড় মারেন।

গাড়িতে থাকা ডক্টর মোহাম্মদ রেজাউল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গৌতম চন্দ্র রায় বলেন, পিংকি ম্যাডাম অটোরিক্সায় খুব বাজে আচরণ করে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তিনি অটোতে থাকা এক যুবক ও সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষককে থাপ্পড় মারেন। একজন শিক্ষক কিভাবে অন্য শিক্ষককে মারতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়।

অটোরিক্সায় থাকা খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও পিংকির সহকর্মী স্বপ্না বেগম বলেন, হঠাৎ গাড়িতে থাকা পথিক নামের যুবককে তিনি থাপ্পড় মারেন এবং বাজে কথা বলতে থাকেন। পরে আঁখি ম্যাডাম শুধু বলেন পাগল নাকি! তখনই পিংকি তাঁকে থাপ্পড় মারেন এবং হিজাব টেনে খুলে ফেলতে চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারেছা আক্তার আঁখির সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই নিন্দনীয়। এই ঘটনা শুনার পরপরই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে খান্দার বিদ্যালয়ে আসে। আমি বাচ্চাদের শান্ত করে নিয়ে আসি। তবে এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।

খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা আক্তার বলেন, সহকারি শিক্ষক ফারিয়া আক্তার পিংকি বিদ্যালয়ে এসে চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে দরজা, জানালায় ধাক্কা-ধাক্কি করতে থাকে।

বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়লে আমি বিদ্যালয় ভবনের কেসি গেইটে তালা লাগিয়ে দিই। আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার অপরাধ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে কিন্তু শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যেভাবে বিদ্যালয়ে এসে বিচার চেয়েছে বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। এই ঘটনায় আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক জানাই এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসেন এবং এই ঘটনা তাঁরা জানছেন ও শুনছেন। এখন তাঁরাই ব্যবস্থা নিবেন।

এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকাকে খান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা থাপ্পড় মারেন। ঘটনাটি শোনার পরপরই বিদ্যালয়ে আসি।

এই ঘটনায় সহরবানু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে আমি এসে নিভৃত করি এবং দুই পক্ষের কথা শুনেছি। অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।