ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রেখে বিপাকে বন মন্ত্রণালয়

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০৮ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকে আমানত হিসেবে রেখেছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। ওই ফান্ডের টাকাগুলো ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকটি হিসাবে রাখা ছিল। কাজ শুরুর পূর্বে টাকা অলস ফেলে না রেখে মুনাফা পাওয়ার আশায় তা রাখা হয়েছিল।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে টাকা তুলতে গিয়ে বিপাকে পরেছে মন্ত্রণালয়। টাকার সঙ্কটে ভুগতে থাকা ফারমার্স ব্যাংক এখন টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। একাধিক চিঠি চালাচালি করেও প্রয়োজনের সময় টাকা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে যে প্রকল্পগুলো নেয়ার কথা ছিল, তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারির বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য চিঠি দেয়া হয়। সর্বোচ্চ সুদের হার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ফারমার্স ব্যাংকের ঢাকার বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ১ বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখা হয়। এ অর্থের মধ্যে এক হিসাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ টাকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

কিন্তু এ অর্থ যথাসময়ে ফেরত না দেয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ পরিশোধ করতে ফারমার্স ব্যাংকে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঐ অর্থ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ফেরত দেয়নি ফারমার্স ব্যাংক।

এদিকে, ব্যাংকটির মতিঝিল শাখায় রাখা ১৭৩ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫০ টাকার আরেকটি এফডিআর গত ২১ জানুয়ারি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। নতুন করে মেয়াদ উত্তীর্ণ এ অর্থ সুদাসলসহ পাওয়ার জন্য গত ১৪ জানুয়ারি এবং ৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই অর্থ পর্যন্ত ফেরত দেয়নি।

সর্বশেষ অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে ফের চিঠি দিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের ঢাকার বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ১ বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, যা দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কয়েকবার চাহিদাপত্র পাঠিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কটের কারণে এফডিআরগুলো ভাঙিয়ে টাকা দেয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নানা বিতর্কের পরও অনুমোদন পায় ফারমার্স ব্যাংক। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকটির নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের সংখ্য। শত শত কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে, আর এসব অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৩ সালের ৩ জুন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ঋণ নিয়মাচার পরিপালনে এবং ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় শিথিলতা দেখা দেয়। ফলে ব্যাংকটিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম সংঘটিত হতে থাকে। মোটা দাগে ১৩টি বিশেষ অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ নীতিমালা অনুসরণ না করে গ্রাহকদের ঋণসুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

ঋণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যবহির্ভূত খাতে অর্থ স্থানান্তরের পরোক্ষ সহায়তা করা হয় ব্যাংক থেকে। অস্তিত্ববিহীন ও সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। ঋণ নিয়মাচার লঙ্ঘন করে ব্যাংকের পরিচালকসহ অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ প্রদান করা হয়। অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিপূর্ণ জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান ও খেলাপি গ্রাহকের বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়।

আর এভাবেই নতুন একটি ব্যংক তিন বছরের মাথায় এসে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে।