কুবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার হুমকি

ইমদাদুল হক মিরন, কুবি প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতা কর্তৃক লাঞ্চনা ও গুলি করে হত্যার হুমকি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। শুক্রবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ঐ দুজন হলেন শাখা ছাত্রলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান হিমেল এবং সহ সভাপতি মোঃ রাইহান ওরফে জিসান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল তাদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন এবং তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এসময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি সাংবাদিক, আমার দায়িত্ব আমি থাকলে কি সমস্যা। মদ খেয়ে মাতলামি কেন করছে সে। এমন মদখোর নেতা অনেক দেখেছি।’

এসময় হিমেল সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’

একইসাথে তার সঙ্গে থাকা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য কর্মীদের নিয়ে তেড়ে আসেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করা চেষ্টা করেন।

ভুক্তভোগী সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু বকর রায়হান জানান, ‘শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই৷ আমাদের দেখে ছাত্রলীগ নেতা হিমেল অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং বলে সাংবাদিক সব এখান থেকে সরে যা৷ তখন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভীর প্রতিবাদ করলে সে তেড়ে আসে এবং বলে সাংবাদিক দেখলেই গুলি করবো৷ আমি এই কথার প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ নেতা জিসানের নেতৃত্বে নজরুল হলের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী আমাকে মারতে আসে।’

এদিকে সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কালকে কোন অস্ত্র ছিলো না।’ আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন হিমেল বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেল এবং জিসানের বিরুদ্ধে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাছাড়া ছাত্রলীগ নেতা হিমেলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ‘প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের’ অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় ক্যাম্পাসে ছিলাম না, পরে শুনেছি। সাংবাদিকদের সাথে যারা এ ধরনের আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইতিপূর্বের ঘটনায় অভিযুক্ত হিমেলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘ঐ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাদের নির্দেশনা ছাড়া শাখা ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ ছাত্রলীগের সংবিধানবিরোধী। এ ব্যাপারে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিবো।’
হলে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হলে মাদক সেবনের বিষয়টি অভিযোগ, প্রমাণিত নয়। তবে মাদকবিরোধী কাজে প্রশাসন যদি কোন ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পর সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সাথে যারা অছাত্রসূলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নিবো। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয়, শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।’