খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ছাত্রী ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ আয়োজন করেছে। ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রীকে তুলে নিযে গণধর্ষণকারী মো: সাকিব, জুনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়াসহ জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করে তিন সংগঠন। তিন সংগঠনের মধ্যে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

মঙ্গলবার (৭ই মার্চ) সকাল ১১টায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় ধরপাকড়, ভূমি বেদখল ও নারী নির্যাতন বন্ধ কর’ শ্লোগানে পানছড়ি উপজেলার মুনিপুর গেইট হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বড়কলক এলাকা ঘুরে মুনিপুরে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিপন ত্রিপরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের পানছড়ি উপজেলা অর্থ সম্পাদক সাবিনা চাকমা ও পিসিপি’র পানছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনিল চাকমা।

যুব নেতা বরুণ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, ভুমি বেদখল ও নারী নির্যাতনের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পানছড়ির বাজার স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত কাউকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করেনি। ধর্ষণকারীরা পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেরালেও পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না।

তিনি আরো বলেন, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে নিজেদের ভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংগঠক মথি ত্রিপুরাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে চারদিকে ঘেরাও করে পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সেনাশাসনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি ধর্ষণ, অন্যায় গ্রেফতার, ভূমি বেদখলসহ সকল নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র-যুব-নারী সমাজের প্রতি আহব্বান জানান।

ছাত্র নেতা সুনীল চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর শোষণ নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, ভূমি বেদখল, উচ্ছেদ, অন্যায়ভাবে ধরপাকড় প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি লামায় অন্যায়ভাবে আটক মথি ত্রিপুরাকে মুক্তি ও পানছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন।

নারী নেত্রী সাবিনা চাকমা বলেন, পাহাড়ি নারীদের কোথাও নিরাপত্তা নেই। প্রশাসন ধর্ষণকারীদের রক্ষা করায় তারা বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। পানছড়িতে ৮ম শ্রেণির পড়ুয়া ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেফতার না করায় ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তিনি অবিলম্বে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশের সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা বলেন, ‘শান্তি’র কথা বলে ১৯৯৭সালে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার চুক্তি স্বাক্ষর হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, ভূমি বেদখল বন্ধ হয়নি, বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। শাসকগোষ্ঠি চুক্তিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্যায়-অবিচার চালিয়ে পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের লামায় এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ, পানছড়িতে স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে দুই দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ ও গত ৫ই মার্চ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গলায় ছুরিকাঘাত করে চম্পা চাকমা নামে এক পাহাড়ি এনজিও কর্মিকে হত্যার মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

তিনি আরো বলেন, সেনাশাসনের কবলে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ধর্ষক, খুনিরা সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে প্রতিনিয়ত খুন, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ কর্ম সংঘটিত করছে। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তিনি পানছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণসহ সংঘটিত সকল ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ভূমি বেদখলসহ অন্যায় দমনপীড়ন, ধরপাকড় বন্ধের দাবি জানান।