চমকের পর চমক দেখিয়ে থেমে গেল মরক্কো রূপকথা, ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা ফাইনাল

প্রাণপণ লড়ল মরক্কো। গোলের সুযোগও এল একাধিক। তবে পূর্ণতা পেল না কোনো আক্রমণ। ফ্রান্সের জাল থাকল অক্ষত। চমকের পর চমক দেখিয়ে সেমিতে উঠে এসে রূপকথার জন্ম দেওয়া মরক্কোর অবিশ্বাস্য পথচলাও থেমে গেল।

১৪ ডিসেম্বর বুধবার রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এসেছে ফ্রান্স। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এল ফরাসি শিবির। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছিলেন এমবাপ্পেরা। এবার শিরোপা লড়াইয়ে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ দুর্নিবার আর্জেন্টিনা। আগামী ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে সোনালি ট্রফির লড়াইয়ে।

ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিটেই ফরাসিদের হয়ে লিড এনে দেন থিও হার্নান্দেজ। সাঁড়াশি আক্রমণে বক্সের মধ্যে দুরূহ কোণ থেকে বেশ উপরে থাকা বলে অ্যাক্রোবেটিক শটে মরক্কোর জাল কাঁপান থিও। ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সবচেয়ে দ্রুততম গোল এটি। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সেমিতে ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচের দুই মিনিটেই গোল করেছিলেন ব্রাজিলের ভাভা।
১০ মিনিটে মরক্কোর প্রথম আক্রমণ। ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস ঝাঁপিয়ে না পড়লে গোল পেতে পারত দলটি। ওনাহির মাপা শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে রক্ষা করেন গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে রেকর্ড ১৯তম ম্যাচ খেলতে নামা লরিস।
১৭ মিনিটে আবার ফ্রান্সের আক্রমণ। তবে অলিভার জিরুদের বুলেট গতির শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ৩৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল পেয়েছিলেন জিরুদ। সময়ও ছিল বেশ। তবে তাড়াহুড়ো করে নেওয়া তার শট লক্ষ্যে থাকেনি।

৪৪ মিনিটে কর্নার কিকে সতীর্থের হেডে বাইসাইকেল কিক নিয়েছিলেন মরক্কোর এল ইয়ামিক। ঝাঁপিয়ে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা ফ্রান্স গোলরক্ষক লরিসের। বল ফেরত আসে পোস্টে লেগে। হতাশ হতে হয় মরক্কোকে।
প্রথমার্ধে নয়টি শটের মধ্যে দুটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে ফ্রান্স। অন্যদিকে মরক্কোর পাঁচ শটের মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে। বল পজিশনে এই অর্ধে এগিয়ে মরক্কো, শতকরা ৫৬ ভাগ। দুই দলই সমান দুটি কর্নার পায় প্রথমার্ধে। প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকলে ফ্রান্স কখনো হারে না বিশ্বকাপের ম্যাচে। এর আগে এমন ম্যাচে ২৫টিতে জয় তাদের, ড্র একটি।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া ছিল মরক্কো। একের পর এক করতে থাকে আক্রমণ। কিন্তু কখনো পোস্ট, কখনো-বা বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফরাসি গোলরক্ষক। উল্টো ৭৯ মিনিটে আরও পিছিয়ে পড়ে মরক্কো। এমবাপ্পের পাসে বদলি হিসেবে মাঠে নামা কোলো মুয়ানি প্রথম স্পর্শেই করেন গোল (২-০)। ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটি তার প্রথম গোল।

দুই গোলে পিছিয়ে থাকা মরক্কো তার পরও হাল ছাড়েনি। করে গেছে একের পর এক চেষ্টা। তবে কপাল খারাপ তাদের। ফ্রান্সের জাল খুঁজে পায়নি তারা শেষ পযন্ত। ২-০ গোলের দারুণ জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে এমবাপ্পে-জিরুদরা।
ম্যাচে বল পজিশনে এগিয়ে ছিল মরক্কো, শতকরা ৬২ ভাগ। ১৩টি শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে। গোল হয়নি একটিও। ১৪ শটের তিনটি লক্ষ্যে রেখে দুটি গোল আদায় করে নেয় ফ্রান্স। তিন কর্নার মরক্কোর, দুটি ফ্রান্সের। এই ম্যাচে মরক্কোর সফল পাস ৫৭২টি, সেখানে ফ্রান্সের ৩৬৪টি।

চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স (১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৮, ২০২২)। আগের তিনবারের মধ্যে দুবারই শিরোপা জিতেছে তারা। এবার ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জিতে ব্রাজিলকে (১৯৫৮, ১৯৬২) স্পর্শ করতে পারবেন এমবাপ্পেরা?