সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তঃ

চেয়ারম্যান সাফিয়ার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বাদী, সাংবাদিকরা অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত

কালিগঞ্জে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের বিরুদ্ধে অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত ঠেকাতে চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীনের পোষ্য ক্যাডার বাহিনীর হাতে অভিযোগকারী, সাংবাদিকরা অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে তদন্ত চলাকালীন মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিস মোড়ে মন্দিরের সামনে রাস্তার উপর এ ঘটনা ঘটে।

তদন্ত ধামাচাপা দিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীনের নেতৃত্বে চৌকিদার রমজান, শাহীন, খাইরুল সহ তার পোষ্য ক্যাডার বাহিনীর সদস্য শাহীন, সিরাজুল গাজী, রফিকুল, আমিনুর, মিজানুর, নুর ইসলাম ভাটা বাবু বোমা লিটন, সুকান্ত ডাক্তার, সোহাগ বাসার, রেজাউল সহ প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেয়।

সকাল ১০টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছানো মাত্র তার পোষ্য বাহিনী মারমুখী হয়ে অভিযোগকারী বাদী সুরুজ মহিউদ্দিন সহ তার লোকজনদের হুমকি দিতে থাকে। ওই সময় তদন্ত কাজে নিরাপত্তাহীনতায় তদন্ত কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি তা তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বহর নিয়ে অভিযোগকারীদের সাথে না নিয়ে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বেষ্টিত বহর নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে আংশিক তদন্ত করে চলে যান।

বেলা ১২টার দিকে অভিযোগ কারীগন কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের মোড়ে মন্দিরের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তদন্তের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওই সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিনের নির্দেশে তার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী কালিকাপুর গ্রামের শাহীন মোড়ল, শংকরপুর গ্রামের সিরাজুল গাজী, রফিকুল ইসলাম, কৃষ্ণনগর গ্রামের আমিনুর, রঘুনাথপুর গ্রামের মিজানুর, চৌকিদার ও চেয়ারম্যানের বডিগার্ড রমজান, চৌকিদার শাহিন, চৌকিদার খায়রুল, কৃষ্ণনগর গ্রামের আমিনুর, নুর ইসলাম, ভাটা বাবু, বোমা লিটন, মানপুর গ্রামের সুকান্ত ডাক্তার, রামনগর গ্রামের বাসার, কালিকাপুর গ্রামের চাঁদাবাজ গ্রুপের সদস্য রেজাউল সহ ৩০/৪০ জনের একটি বহর ঘটনাস্থলে এসে বাদি সুরুজ আলী, মহিউদ্দিন, ওলামালীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার সহ সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে মারতে উদাত্ত হয়ে লাঞ্ছিত করে।

পরে কৃষ্ণনগর বাজারের দীপকের সেলুনের দোকানে অভিযোগকারী মহিউদ্দিনকে আটকে রেখে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

এ ব্যাপারে অভিযোগকারী সুরুজ আলী, মহিউদ্দিন, আব্দুস সাত্তারসহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত কর্মকর্তা কৃষক অফিসার ওয়াসিম উদ্দিন প্রথম থেকেই চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে তার অফিসে কাগজপত্র জমা না নিয়ে সে ছুটি চলে গেছে যে সুযোগ এসে দুর্নীতি ঢাকতে পুরাতন মেশিন বদলে নতুন সিঙ্গার মেশিন রাতারাতি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছে আজ তদন্তে এসে আমরা অভিযোগকারী আমাদের কথা না শুনে সে চেয়ারম্যানের ক্যাটার বাহিনীর ভয়ে দুই একটা তদন্ত করলেও তাদেরকে সাথে নেওয়া বা সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে চলমান আছে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তের সময় অভিযোগকারীদের সরেজমিনে তদন্তে না নেওয়া প্রসঙ্গে কোনো সদত্তর মেলেনি।

প্রসঙ্গতঃ ২০২১ -২২ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা খাতের আওতায় সাধারণ বরাদ্দ বিবিজি হতে ২ কিস্তিতে ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ২শত টাকা বরাদ্দ।উক্ত বরাদ্দ হতে চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিন ইউনিয়ন পরিষদের কোন সদস্যকে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছামতন ৫টি প্রকল্প গ্রহণ করে। ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু মুরাল নির্মাণের জন্য য৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করলেও এখান থেকে ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা লুটপাট করে। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলবদ্ধতা নিরাশন পাইপ বসনো বাবদ ৮৬,৬০০ টাকা এবং দ্বিতীয় মেয়াদে একই নামে আরো ১টি প্রকল্প নিয়ে সেখানে ৭৮ হাজার ৪৬৯ টাকা বরাদ্দ নিয়ে ২০ হাজার টাকার কয়েকটি পাইপ সরবরাহ করে বাকি টাকা লুটপাট করা হয়।

৯টি ওয়ার্ডে গরিব অসহায় দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ বাবদ ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে ৪৭০০ টাকা করে ১৭ টি পুরাতন বাটারফ্লাই মেশিন দিয়ে৮০হাজার টাকা লুট করার অভিযোগ রয়েছে। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র হতে মোসলেম শেখের বাড়ির অভিমুখে নতুন মটর ক্রয় ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও লাইন সংস্কার বাবদ ১ লক্ষ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি মটর ক্রয় করে বাকি টাকা আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট ইউনিয়নবাসী লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্তের জন্য কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিনের উপর দায়িত্ব দেন। উক্ত নির্দেশে কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন গত ২২ ডিসেম্বর তদন্ত এর জন্য কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানে চেয়ারম্যান কে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের এস্টিমেটসহ সকল কাগজপত্র ভাউচার সকাল১০টার মধ্যে জমা দিতে বলে ছুটি চলে যান। যে কারণে চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিন অফিসে যেয়ে কোন কাগজপত্র জমা না দিয়ে ফেরত আসে। এই সুযোগে বিতরণকৃত ৪৭ শত টাকার মূল্যের পুরাতন বাটারফ্লাই সেলাই মেশিন বদলে রাতারাতি অধিকাংশের বাড়িতে নতুন সিঙ্গার সেলাই মেশিন তদন্ত ঢাকতে দিয়ে আসে।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেলে দুর্নীতির তদন্ত ঢাকতে চেয়ারম্যান সাফিয়ার দৌড়ঝাপসহ গতকালকের তদন্তের সময় তার লাঠিয়াল বাহিনী প্রস্তুত রাখে বলে এলাকাবাসী জানান। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তার পরস্পর সহযোগিতায় গত ২৬ তারিখ কাগজ জমা না দেওয়া এবং সেলাই মেশিন বদল করা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আলী তদন্তকারী কর্মকর্তার অসহযোগিতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গত ২৭ ডিসেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

তারপরেও গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি সুস্থ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে ইউনিয়নবাসি।