ঠাকুরগাঁওয়ের ভূল্লীতে সরকারি রাস্তার গাছ কাটলেন চেয়ারম্যান, জব্দ করলেন ইউএনও

ঠাকুরগাঁওয়ে ভূল্লী থেকে ফাড়াবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের রাস্তা প্রশস্ত উন্নয়নের কাজ চলছে৷ উন্নয়নের পাশাপাশি সড়কের কাছ কেটে হরিলুটের রমরমা ফন্দি এটেছিলেন চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও তাদের বাহিনী৷ এমন সময় ঘটনা স্থানে হাজির সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন। সমস্ত গাছ জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদ নেয়ার নির্দেশ দেন এবং সড়কের কাজ সাময়িক বন্ধ করে দেন।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪ নং বড়গাঁও ইউনিয়নের ভূল্লী -ফাড়াবাড়ির বড়গ্রাম মাদ্রাসা গ্রামীণ নামক একটি সড়কে।

শনিবার দুপুরে অবৈধভাবে কোন রকম সরকারি টেন্ডার ছাড়াই গাছ কাটার খবর পেয়ে সরজমিনে এসে ইউএনও কথা বলেন, গাছ কাটা শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে। তারা ইউএনওকে জানান বড়গাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান, স্থানীয় ইউপি সদস্য তাইবুজ্জামান বাবুর নির্দেশে গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে।

এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের শ্রমিকরা জানান, প্রায় ২০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার মজুরি চেয়ারম্যান দিবেন বলেও জানান শ্রমিকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশে সরকারি জমিতে চুক্তি ভিত্তিক গাছ রোপনের পর তা ৩০ বছর ধরে পরিচর্যা করে আসছেন স্থানীয় কয়েকজন উপকারভোগী নারীরা৷

ভূল্লী বড়গাঁও থেকে ফারাবাড়ি রাস্তায় প্রায় ৮ কিলোমিটার এ সড়কে ১৯৯২ সালে গাছ লাগানো প্রকল্পের আওতায় প্রথম পক্ষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় পক্ষ অরগানাইজেশন ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট(ওআরডি) ও তৃতীয় পক্ষ বনলতা মহিলা উন্নয়ন দল এর স্থানীয় দশ জন নারীর সঙ্গে চুক্তি নামা হয়।

এ চুক্তি নামায় প্রত্যেক নারী ১৫০ গাছ রোপন করলে মোট ১ হাজার ৫০০ গাছ রোপন করা হয়। যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর মেয়াদ রয়েছে। এ সময়ের পর গাছগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেটে মুনাফার একটি অংশ পাবেন সে সব নারীরা।

কিন্তু এরই মাঝে সড়ক প্রসস্থ করণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। তবে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলেছে নারীদের অভিযোগ।

উপকার ভোগী এসব নারীদের অভিযোগ, আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমরা বাঁধা দিতে গেলে আমাদের কারো কথা শোনা হয়নি৷ উল্টো আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। পরে আমরা ইউএনও স্যার কে মুঠোফোনে জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন। কিন্তু এরই মাঝে কিছু গাছ, গাছের পাতা ও ডালপালা হরিলুট হয়ে গেছে বলে জানান নারীরা।

বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের দাবি, শুক্রবার (১৫ মার্চ) ঠিকাদার রাস্তার বক্সকাটিং করার সময় ভেকু মেশিন ব্যবহার করার ফলে গাছগুলো উপড়ে গেছে। গাছ যাতে লুট না হয় এরজন্য ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হচ্ছিলো।

গাছ, পাতা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, পাতা বিক্রি করা হয়েছে এখনো গাছ বিক্রি করিনি৷ বিক্রির অর্থের হিসাব তিনি তাৎক্ষণিক দিতে পারেননি৷ কার নির্দেশে পাতা বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

তবে ঠিকাদারের দাবি গাছ উপড়ে ফেলার মতো কোন নির্দেশনা ভেকু চালকের প্রতি তার ছিলোনা। তিনি বলেন, যেখানে গাছ কাটা হয়েছে এর আগে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বক্স কাটিং করা হয়েছে। কয়েকদিন যাবৎ বক্স কাটিং এর কাজ চলছে। কোন গাছ কাটা বা উপড়ে ফেলা হয়নি৷

তিনি আরও বলেন, আমি ভেকু গাড়ির চালকের সাথে কথা বলে জেনেছি, স্থানীয় কিছু লোকজন জোর পূর্বক তাকে দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলিয়েছে এবং বলেছে তারা নাকি গাছগুলো নিয়ে যাবে৷ আমি ঠিক চিনিনা তারা কারা। এ ঘটনায় তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে কি নিয়ম আছে জানতে চাইলে সদর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের কোন তথ্য জানাতে পারেননি৷

তবে ওই কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ইউএনওকে চিঠি দিবেন। পরবর্তীতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সেসব গাছ চিহ্নিত করন ও দাম নির্ধারন করতে বলবেন এবং নিলামে গাছ বিক্রি করবেন। আরও কোন নিয়ম থাকলে ইউএনও স্যার ভালো জেনে থাকবেন।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমন কোন নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা এ তথ্য নিশ্চিৎ হতে আবার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি সদর উপজেলার এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, গাছ কার নির্দেশে কাটা হয়েছে বা উপড়ে ফেলা হয়েছে এগুলো তদন্ত চলছে। তাৎক্ষনিক মন্তব্য করতে চাইনা। তবে এতগুলো গাছ কাটার ঘটনায় যা হয়েছে তা অনৈতিক কাজ হয়েছে। আপাতত সড়কের বক্স কাটিং এর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে, তদন্ত হবে এবং দোষীরা আইনের আওতায় আসবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।