নরসিংদীর রায়পুরায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ

নরসিংদীর রায়পুরায় প্রবাস ফেরত স্বামী ও তার পরিবার কর্তৃক তিন সন্তানের জননী স্ত্রী আফসানা আফসার (২৮) কে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নিহতের মা হাসনা হেনা বেবি।

এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের নলবাটা গ্রামে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান রায়পুরা থানার উপ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন।

হত্যার পর স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেছেন।
নিহত আফসানা আফসার (২৮) আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের করিমগঞ্জ গ্রামের প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী হযরত আলী (৩৮) নলবাটা গ্রামের মৃত জহর আলীর ছেলে।

নিহতের পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ১৪ বছর আগে আফসানা আফসারকে হযরত আলীর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবনে ১২ ও ৬ বছর বয়সী দুই মেয়ে ও ৮ বছরের এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর স্বামী হযরত আলী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তার শ্বশুর বাড়ি হতে ৩ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেয়।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে মাঝেমধ্যে ছুটিতে দেশে ফিরলেও ধার নেয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি। এক মাস আগে ছুটিতে দেশে ফিরেন স্বামী হযরত আলী। দেশে ফিরে স্ত্রী আফসানার মাধ্যমে পরিবারের নিকট আরও ১ লাখ টাকা দাবী করে স্বামী। শাশুড়ি হাসনা হেনা বেবি দাবি করা ১ লাখ টাকা না দেয়ায় স্বামী—স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এ নিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের সাথে ঝগড়া লেগে থাকতো স্ত্রী আফসানার।

এরই জেরে বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় তিন সন্তানকে কৌশলে ঝালমুড়ি কেনার জন্য দোকানে পাঠিয়ে দেয় স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। পরে স্বামী হযরত আলী, তার ভাই ছিদ্দিক মিয়া, শাশুড়ি আমেলা খাতুনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ির পূর্ব পাশের একটি পতিত জায়গায় নিয়ে আফসানা আফসারকে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের মা হাসনা হেনা বেবি বলেন, টাকা না দেয়ায় কলহের জেরে পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে জবাই করে হত্যা শেষে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে হযরত আলী। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করেছেন।

আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার বেনজির আহমেদ জানান, “অভিযুক্ত হযরত আলী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। এক মাসের মতো হয়েছে প্রবাস থেকে এসেছেন। স্বামী প্রবাস থেকে ফেরার পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। ঘটনার রাতের পনেরো দিন আগেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছিল, আমরা সেটা সামাজিকভাবে স্বাভাবিক করেছিলাম। সম্ভবত একই কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে”।

রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক ও আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বিট পুলিশ অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, “স্বামী হযরত আলী মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করে স্বামী পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।