পাবনার যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিম প্রতারণার অভিযোগে স্বামীসহ গ্রেফতার

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পৌর যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি মিম খাতুন ওরফে আফসানা মিম (২৬) ও তার স্বামী ওবাইদুল্লাহকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে রাজধানীর গুলশান থানা পুলিশ।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাবনা শহরের মাসুম বাজার এলাকার বাসা থেকে সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত মিম খাতুন পাবনা পৌর সদরের পুরাতন মাসুম বাজার এলাকার মিন্টু মোল্লার মেয়ে এবং তার স্বামী ওবাইদুল্লা একই এলাকার মৃত মাওলানা কেসমত উল্লাহর ছেলে। মিম পাবনা পৌর যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানূর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রতারণা মামলায় বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের পাবনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। এর আগে গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু।’

মামলার বাদী মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু (৩২) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা হাটপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। পেশায় তিনি ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। বর্তমানে রাজধানীর শাহজানপুরে বসবাস করেন। গুলশান-২ এ তার এবিএস নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মামলার এজাহারে মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে মিমের সঙ্গে তার পরিচয়। এর কিছুদিন পর ওবাইদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দুলাভাই হিসেবে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মিম। পরবর্তীতে পাবনা শহরের রবিউল মার্কেটে ব্যবসার কথা বলে ও সেই ব্যবসায়ী অংশীদার রাখার আশ্বাসে বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে ১৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৯০ টাকা ধার নেন মিম ও ওবাইদুল্লাহ। গেলো বছরের ২ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আমার কাছ থেকে উল্লেখিত টাকা ধার নেন তারা।’

‘বিশ্বাসের কারণে দলিল ছাড়া লেনদেন হলেও পরে দলিল করতে চাইলে তারা টালবাহানা শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টাকা ফেরত চাইলে তারা পাওনা টাকা ফেরত দেবেন না বলে মনিরুজ্জামান ওরফে বাবুকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।’

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি দুলাভাই বলে পরিচয় দিলেও মূলত মিমের ৪র্থ স্বামী ওবাইদুল্লাহ। তারা দু’জন মিলে পরিকল্পিতভাবে আমাকে প্রতারণার জালে ফেলে। এর আগেও অনেকের সঙ্গে এমনটা করেছে। উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে আমি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করি। আশা করছি, আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে এ বিষয়ে সুষ্ঠু বিচার পাবো।’

গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতারণার মামলায় আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তিনি কোন দল করেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এজাহারভুক্ত আসামী এটাই তার বড় পরিচয়। আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

এ বিষয়ে পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী এ্যাড. আরেফা খানম শেফালী বলেন, ‘আফসানা মিম ওরফে মিম খাতুন পাবনা পৌর যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি। তার প্রতারণা ও গ্রেফতারের বিষয়টি জেনেছি। এজন্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে পৌর যুব মহিলা লীগ।’

ঘটনার বিষয়ে পাবনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন আলী বলেন, এই প্রতারণার অভিযোগ পাবনা থানাতে নয় গুলশান থানায় করেছে ভুক্তভোগী। সেই আলোকে গুলশান থানা পুলিশ আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে অভিযানের বিষয়ে। আমরা যৌথভাবে অভিযান করে মিম ও তার স্বামীকে শহরের রাঘবপুর এলাকা থেকে আটক করে নিয়ে গেছে তারা। তবে এই মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, মিম ও তার স্বামী ওবাইদুল বহু মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আয় করে থাকে। তারা একে অপরকে নতুন গ্রাহকদের কাছে ভাইবোন দুলাভাই শ্যালিকা পরিচয় দিয়ে থাকে। অবিবাহিত বলে কৌশলে অর্থ নিয়ে আর ফেরত দেয়না। সুন্দর চেহারা বলে অনেকেই সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সম্পর্ক করে দীর্ঘদিন ধরে সে এই প্রতারণা করে আসছে বলে জানান তারা। তাই আইনগত ভাবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী।