ময়মনসিংহ বিভাগের সদরদপ্তর স্থাপনে ১২২৪ কোটি টাকা অনুমোদন

নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সদরদপ্তর স্থাপনে প্রস্তাবিত ভূমির অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের জন্য ১ হাজার ২২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্বে করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সচিবরা অংশ নেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

এ সময় পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল রশীদ, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার, তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোরশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফংয়ে জানানো হয়, নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সদরদপ্তর স্থাপনে প্রস্তাবিত ভূমির অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসন এবং আধুনিকায়নের জন্য ১ হাজার ২২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটাসহ একনেক সভায় মোট সাত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাত প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ১২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি টাকার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

অঞ্চলভিত্তিক জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উন্নত গ্রিনহাউজ স্থাপন করবে। এছাড়া বিনার প্রধান কার্যালয়ের গবেষণাগারগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ র্যাপিড জেনারেশন অ্যাডভান্স টেকনোলজি স্থাপন করা হবে। এজন্য বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিনার প্রধান কার্যালয়ে ৫০০ বর্গমিটার জেনারেশন অ্যাডভান্স টেকনোলজি স্থাপন, ২১০ বর্গমিটার রেইন আউট শেল্টার, ৫০ বর্গমিটার গ্রোথ চেম্বারসহ প্রয়োজনীয় গবেষণা অবকাঠামো নির্মাণ। মাঠ ও উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের ২৫টি উচ্চফলনশীল জাত এবং ১৫টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে ১৪টি ‘বিনা কৃষি ভিলেজ’ স্থাপন। কৃষকপর্যায়ে ৩৫০০ টন প্রজনন ও মানসম্মত বীজ উৎপাদন, ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণ। মাঠপর্যায়ে ৭৪২টি এডাপটিভ ট্রায়াল এবং জাত/প্রযুক্তি বিস্তারে ২৫ হাজার প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে।

এছাড়া ৩৫০টি জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ, মূল্যায়ন, বৈশিষ্ট্যায়ন ও ব্যবহার করে জাত উদ্ভাবন। ১৪৮টি খামার যন্ত্রপাতি, ৪৩২টি গবেষণা যন্ত্রপাতি, ৪০টি তথ্য ও টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি, ১৩০টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ৩৬টি অফিস সরঞ্জাম, ৬২টি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ৫২১টি আসবাবপত্র, দুটি পিকআপ ও ৮টি মোটরসাইকেল কেনা হবে। ১৫ জন বিজ্ঞানীর দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা (পিএইচডি), ৬০ জন বিজ্ঞানীর বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, ১৫০ জন বিজ্ঞানী ও ২৮০ জন কর্মকর্তার স্থানীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। মাঠপর্যায়ের ২ হাজার জন কৃষি কর্মকর্তা, ১ হাজার ৫০০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং ১৫ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

দেশের সাতটি সিটি করপোরেশন ও ৩৭টি জেলা পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় আধুনিক যন্ত্রপাতি বিশেষত ৮১টি হুইল লোডার, ২৪টি ব্যাকহো লোডার এবং ৬৪টি এসফল্ট রোলার কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ‘প্রকিউরমেন্ট অব মেশিনারিজ অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট ফ্রম বেলারুশ ফর সিলেকটেড মিউনিসিপলিটিস’জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৩ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। মঙ্গলবার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহের মাধ্যমে দেশের সাতটি সিটি করপোরেশন ও ৩৭টি জেলা পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভাসমূহের উন্নয়ন কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়ানো, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের টেকনিশিয়ান ও চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া, মেশিনারিজ এবং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের ড্রেন মানসম্মতভাবে পরিষ্কার রাখা এবং রাস্তা বা কালভার্ট যান চলাচলের উপযোগীকরণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা বাড়ানো।

অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে— কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমারে সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজশাহী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুকরণ প্রকল্প ২৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে ডলার সাশ্রয়ে আপাতত তা স্থগিত করা হয়েছে।