যশোরে ভালোবাসার পরীক্ষায় আগুনে পুড়ল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী!

ভালবাসার পরীক্ষা দিতে আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হয়েছে যশোরের পুতুল রানী দাস (১৬) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে।

মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) রাতে ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া ঋষিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

স্বজনদের অভিযোগ, চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটালেও তাকে রক্ষা না করে চুপচাপ ছিলেন স্বামী।
অবশ্য স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাগের বসে আত্মহত্যা করেছে পুতুল এবং তাকে রক্ষা করতে গিয়ে স্বামী প্রদীপ দাসও (২৫) দগ্ধ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রদীপ ও তার পরিবার ১৪ বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে এবং প্রায় এক বছর আগে পুতুলকে তার প্রথম স্বামীর সংসার থেকে ফিরিয়ে এনে বিয়ে করে প্রদীপ। পুতুল চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

পুলিশ বলছে, পারিবারিক করহের জের ধরে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ ওঠায় প্রদীপকে আটক করা হয়েছে।

নিহতের কাকা সঞ্জয় দাস জানান, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল পুতুল রানী দাস। প্রতিবেশীর টিউবওয়েলে পানি আনতে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করে স্বামী। কিন্তু পুতুল রাজি না হওয়ায় তাকে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর কথা বলে প্রদীপ। তার কথায় নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় পুতুল। কিন্তু স্বামী তাকে রক্ষার কোনও চেষ্টাই করেনি।

তিনি আরও জানান, পুতুলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঘরের দরজা খুলতে বললেও প্রদীপ ছিল নিশ্চুপ। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে লোকজন দেখে, পুতুল জ্বলছে আর প্রদীপ খাটে বসে সিগারেট টানছে। লোকজন পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে প্রদীপও সেই সময় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এতে তার হাত পুড়ে যায়।

নিহতের মা পুষ্পরাণী দাস জানান, রাতে প্রদীপ ও তার স্ত্রী পুতুলের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে তাদের চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখেন ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলছে। এরপর প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করা হয়। সেখান থেকে সকালে ঢাকায় নেয়ার পথে গোপালগঞ্জে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যায় পুতুল। তার মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।’

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, ঘটনা শুনেই আমরা রাতে ঘটনাস্থলে যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। আর অভিযোগ ওঠায় প্রদীপকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মেয়েটি যদি স্বেচ্ছায়ও গায়ে আগুন ধরায়, তারপরও প্রদীপের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা হবে। কেননা সে মেয়েটিকে রক্ষা করার কোনও চেষ্টা করেনি।

এদিকে, যশোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহম্মেদ তারেক শামস চৌধুরী বলেন, ভোররাতে দগ্ধ দম্পতিকে হাসপাতালে আনা হয়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এছাড়া আহত প্রদীপের দুটি হাত, চোয়াল ও মাথার চুল পুড়ে গেছে। তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

আহত প্রদীপ দাবি করেছেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে পুতুলের সাথে তার ঝগড়া হয়। স্ত্রী নিজেই নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এতে তার দু’হাত পুড়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করে।

ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বামীর দেয়া আগুনে পুতুল দাসের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহতের সৎকার শেষে পরিবার অভিযোগ দেবে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী প্রদীপ পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছে।