যে গ্রামে মৃতদের খাবার না দিয়ে কেউ খায় না

অন্ধ্রপ্রদেশের একটি গ্রামে ঢুকলে যে কারোরই মনে হবে কোনো কবরস্থানে এসে গেলাম নাকি! প্রশ্নটা মনে আসা স্বাভাবিক।

কারণ কুরনুল জেলার এই আইয়াকোন্ডা গ্রামের প্রতিটা ঘরের সামনেই আছে একটা বা দুটো কবর। সেই কবরের সামনে খাবারও রয়েছে।

জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম এই আইয়াকোন্ডা। মালাদাসরী সম্প্রদায়ের শ দেড়েক পরিবারের বাস এখানে। -খবর বিবিসি বাংলার।

বহুকাল ধরে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা রীতি চলে আসছে যে, মৃত আত্মীয়পরিজনকে ঘরের সামনেই কবর দেন তারা।

বাড়ির নারী আর শিশুরা প্রতিদিন কাজকর্মে যান এই কবরগুলো পেরিয়েই। প্রতিদিন ওই কবরে পুজো আর প্রসাদ দেন পরিবারের জীবিত সদস্যরা।

এমনকি বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটিও কেউ ছোঁয় না যতক্ষণ না সেই খাবার কবরে প্রসাদ হিসাবে দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটিও কবরে না দিয়ে মুখে তোলেন না কেউ।

কীভাবে শুরু হল বাড়ির সামনে কবর দেয়ার এই রীতি?

গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান শ্রী নিবাসুলু বলেন, আধ্যাত্মিক গুরু নাল্লা রেড্ডি আর তার শিষ্য মালাদাসারী চিন্তলা মুনিস্বামী এই গ্রামের উন্নয়নের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। কঠিন পরিশ্রম করেছেন তারা গোটা গ্রামের জন্য। অর্থও ব্যয় করেছেন। তাদের কাজকে শ্রদ্ধা জানাতেই গ্রামে তাদের একটা মন্দির রয়েছে, পুজো হয় নিয়মিত। আর ওই গুরুদের সম্মান জানানোর মতোই নিজের পরিবারের মৃত সদস্যদেরও সম্মান জানাতে বাড়ির সামনেই তাদের কবর দেয়ার রীতি চালু আছে।

শুধু যে পুজো দেয়া হয় বা প্রসাদ দেয়া হয় কবরগুলোতে তা নয়। বাড়িতে যদি কেউ পাখা, টিভির মতো যন্ত্র কেনে, সেগুলোও ব্যবহার করার আগে কবরের সামনে রাখা হয়।

শ্রী নিবাসুলু জানিয়েছেন, গ্রামের মানুষের মনে যে অন্ধবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছেন তারা, যাতে তারা বড় হয়ে অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে।

শিশুদের পড়াশোনা আর দেখভালের জন্য একটা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন। যার জন্য পাহাড়ের কোলে একটা ছোট জমির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন শ্রী নিবাসুলুরা।

গ্রামে রয়েছে আরও নানা অন্ধবিশ্বাস। শুধু যে পরিবারের মৃত সদস্যদের বাড়ির সামনে কবর দেয়ার মতো অন্ধবিশ্বাস রয়েছে, তা নয়।

বাসিন্দারা গ্রামের বাইরে কারও সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি করেন না, এমনকি অন্য কারও খাটেও শোয় না কেউ।

স্থানীয় মণ্ডল পরিষদ সদস্য খাজা নবাব মনে করেন, অন্ধবিশ্বাস কাটিয়ে ওঠার একটা উপায় হল- সরকার যদি গ্রামবাসীর কবর দেয়ার জন্য একটা জমি দিয়ে দেয়।

অন্ধবিশ্বাস দূর করতে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চাইছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।

তবে গ্রামের সমাজপতি রঙ্গাস্বামী জানাচ্ছিলেন, বহু যুগ ধরে যে রীতি-রেওয়াজ আমরা পালন করে আসছি, সেটি যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে আমাদের সবারই ক্ষতি হতে পারে। আমরা তো চিন্তিত এ কারণে যে ভবিষ্যতে গ্রামে তো কবর দেয়ার জায়গাই থাকবে না। তখন কি হবে!

কুরনুল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বুট্টা রেণুকা অবশ্য জানতেনই না যে তারই নির্বাচনী এলাকায় এ রকম কোনো গ্রাম রয়েছে। বিবিসির কাছ থেকেই বিষয়টি প্রথম জানলেন।

আর এর পরেই জেলা শাসকের কাছ থেকে আইয়াকোন্ডা নিয়ে একটা রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।