রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ধর্ষকগুরু গুরমিত

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমকে নিজের দুই নারী শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার দুপুরে রোহতক জেলার সুনারিয়া কারাগারে এ রায় দেন পাঁচকোলার বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক জগদীপ সিং।

এসময় আদালতে ভণ্ড ওই ধর্মগুরুর ধর্ষণ অপকর্মের শাস্তি আরো কঠোর হওয়ার দাবি তুলেছিল দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।

তবে আদালতের রায়ের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ধর্ষক গুরমিত সিং। তিনি এসময় আদালত থেকে নামতেও অস্বীকার করেন এবং কান্নাকাটি করতে থাকেন।

আদালত ও জেল সূত্রে জানা যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় জেল এলাকাতেই গুরুর অপকর্মের শাস্তির রায় শোনাতে উপস্থিত হয় আদালত। আদালতের বিচারক যখন গুরুর শাস্তি পড়ে শোনাচ্ছিলেন তখন গুরু গুরমিত রাম-রহিম সিং ফ্লোরে শুয়ে পড়েন ও কান্নাকাটি করতে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘আমি নির্দোষ। আমাকে তোমরা মাফ করে দাও’। এসময় তিনি কাঁদতে থাকেন এবং কাঠগড়া ত্যাগে অসম্মতি জানান।

পরে বিশেষ কমান্ডো দলের সদস্যরা তাকে টেনে হিঁচড়ে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে নেন। পরে তার মেডিকেল চেকআপ করানো হয়। এরপর তাকে কারাগারে নির্ধারিত ঘরে নিয়ে যান নিরাপত্তা রক্ষীরা। এই ঘরেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ধর্ষক ধর্মগুরুর জেল জীবন।

এর আগে গত শুক্রবার ধর্মগুরু গুরমিতকে ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন আদালত। এরপর তাকে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য পাঁচকোলা থেকে রোহতকের এ কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে গুরমিতকে দোষী সাব্যস্ত করার পর ভক্তরা আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং কয়েকশ’ জন আহত হয়।

এ কারণে সোমবার প্রভাবশালী ধর্মগুরু গুরমিতের দণ্ড ঘোষণা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করে ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনশৃংখলা বাহিনী। নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয় হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলো। আইনশৃংখলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে গোটা উত্তর ভারত জুড়ে। হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে আধা সামরিক বাহিনীর ২৮ কোম্পানি সেনা নামানো হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

হরিয়ানার পুলিশ জানিয়েছে, রোহতক জেলায় বহু স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে কোনো ধরনের বিশৃংখলা হলেই পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রোহতকের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নবদ্বীপ সিং বীরক জানান, এ জেলায় গুরমিত সিংয়ের ডেরা সাচ্চা সৌধার ১০টি কেন্দ্র রয়েছ। এরইমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগাম সতর্কতার জন্য শ’ খানেক গুরমিত ভক্তকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া আগাম সতর্কতা হিসেবে হরিয়ানার সব স্কুল-কলেজ এবং পাঞ্জাবের ১৩টি জেলার স্কুল-কলেজ এবং ভারতের রাজধানী দিল্লি গাজিয়াবাদ ও নয়ডার বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ডেরা সাচ্চা সৌধা নামের ধর্মীয় সংস্থার প্রধান ধর্মগুরু ৫০ বছর বয়সী গুরমিত রাম রহিম সিং। হরিয়ানার সিরসা জেলায় সাতশ’ একর জায়গা জুড়ে সংস্থাটির সদর দফতর অবস্থিত। এখানে থাকা নারী শিষ্য ও সেবিকাদের গুরমিত নিয়মিত ধর্ষণ করে থাকেন বলে ২০০২ সালে অভিযোগ করেন এক নারী শিষ্য। ওই নারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে চিঠি লিখে এ অভিযোগের কথা জানান। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার তদন্ত নেমে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। পরে ওই নারী শিষ্য ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ১৫ বছর পর সেই মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।