সাতক্ষীরায় ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা গেলো কোথায়?

সারাদেশে ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনার টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। একই প্রতিষ্ঠানের কেউ পেয়েছেন আবার কেউ পান নি। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও এর সদুত্তর দিতে পারছে না স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা। সেই টাকা গেলো কোথায়?- এমন প্রশ্ন উঠেছে। অথচ গত বছর চেকের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে অনুরূপ প্রণোদনার টাকা সকলে পেয়েছিলেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র, নাম, মোবাইল নাম্বার সহ সবকিছু সঠিক থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনার টাকা প্রাপ্তিতে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের এমন ভোগান্তি আর না পাওয়ার শংকা মেনে নেয়া কষ্টের বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে বিপর্যস্ত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের আগে প্রণোদনার টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার টাকা ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
‘রহস্যজনক নানান জটিলতা’ কাটিয়ে প্রণোদনার সেই টাকা ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে মোবাইল ফোনে নগদ একাউন্টে আসা শুরু হয়। তবে প্রণোদনার টাকা একই প্রতিষ্ঠানের একই স্তরের (উচ্চ মাধ্যমিক / ডিগ্রি) একই সাথে কর্মরত ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ পেয়েছেন আবার কেউ পাননি।
অন্যদিকে একই উপজেলার একটি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের মোবাইলের নগদ একাউন্টে টাকা এসেছে আবার পাশের অন্য ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এখনো টাকা আসেনি।

এমনই তছরুপ, লোপাট আর নয়ছয়ের ভোগান্তিতে প্রণোদনার টাকা না পাওয়া ভুক্তভোগীরা। যারা এখনও পাননি তাদের টাকা গেল কোথায়?- এমন প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

তারা বলছেন, ‘গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুরূপভাবে প্রণোদনার টাকা ব্যাংক একাউন্ট চেক এর মাধ্যমে শিক্ষকদের জন্য ৫ হাজার ও কর্মচারীদের জন্য আড়াই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেসময় তালিকাভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা ভোগান্তিতে সহজেই টাকা পেয়েছিলেন। তবে এবার নগদ একাউন্টের মাধ্যমে মোবাইল একাউন্টে টাকা আসার প্রক্রিয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রী স্তরে কর্মরত ছয় জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন পেয়েছেন, দুজন পাননি। কর্মচারী চারজনের মধ্যে দুজন পেয়েছেন, দুজন পাননি।’

সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের ননএমপিও শিক্ষক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘তার কলেজের ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকদের ছয়জনের মধ্যে চারজন নগদ একাউন্টে মোবাইলে টাকা পেয়েছেন অথচ দুইজন এখনো পাননি। আমাদের সব তথ্য সঠিক আছে।’

একই উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের অফিস সহকারি বিলকিস রুখসানা বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত তার কলেজের কোন শিক্ষক কর্মচারী প্রণোদনার টাকা পাননি।’

এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হামিদ জানান ‘প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তালিকা জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়, তাতে কোন ভুলত্রুটি এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গতবছর অনুরূপ তালিকা পাঠানো হলে চেকের মাধ্যমে টাকা আসে। সেই একই তালিকা এবারও পাঠানো হয়েছে তাতে কেন টাকা আসলো না বিষয়টি বুঝতে পারছিনা। আমাদের এখানে যেটা করনীয় সেটা করেছি, আমাদের এই মুহূর্তে কোনো নির্দেশনা নাই।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে আমাকে কোন কিছু অবগত করে নাই।’

এদিকে, ভুক্তভোগী ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের আগে ১২মে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া সারা দেশের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ৫ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিলো। এতে বলা হয়েছিল- সারাদেশের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন, কারিগরি ও মাদারাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীকে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে। এসব শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদান দেয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে প্রায় ৭৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেক নন-এমপিও শিক্ষক এককালীন অনুদান পাবেন ৫ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কর্মচারী পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ৪৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৬১ হাজার ৪৪০ নন-এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য ২৮ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।’