সুস্থ সবল হয়েও প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন স্বামী-স্ত্রী

স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সুস্থ সবল এর পরেও তাদের নামে রয়েছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। দীর্ঘদিন ধরে তুলছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। এভাবে সরকারি সহায়তার ভাতা তুলছেন নেত্রকোণার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের শিবপাশা গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে তারু মিয়া ও তার স্ত্রী সমলা বেগম। প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারু মিয়ার প্রতিবন্ধী ভাতার বহি নং ১৫৩ ও তার স্ত্রী সমলা বেগমের বহি নং ১৫৭ নামে প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন নিয়মিত। সব মিলিয়ে তিন মাস পর পর সাড়ে চার হাজার টাকার ভাতা তুলে নিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী। তবে এসব ভাতার বিষয়ে এলাকার কিছু সচেতন মানুষ জানলেও তারা প্রভাবশালী থাকায় কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে শনিবার তাদের গ্রামের বাড়িতে গেলে ভাতাভোগী স্ত্রী সমলা আক্তারকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ির সামনে তাদের মুদির দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। স্বামী উপজেলার সদরে গেছেন বলে তিনি জানান। স্বামী-স্ত্রীর নামে ভাতার কার্ড আছে কিনা সমলা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের দুজনের নামে ভাতার কার্ড আছে এবং নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করছেন। তবে তারা প্রতিবন্ধী কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন জানান, তারা অনেক দিন ধরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রতিবন্ধী না হয়েও উত্তোলন করছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। দু’জনই সুস্থ-সবল মানুষ যে কোনো কাজ করতে পারে। তবে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে বলতে পারে না। জরুরি ভিত্তিতে তাদের নাম তালিকা থেকে বাতিল এবং প্রতারণা করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আয়নূল হক বলেন, ‘আমার গ্রামের তারু মিয়া ও তার স্ত্রী সমলা আক্তার প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করছেন, বিষয়টি আমি কয়েক দিন হলো জেনেছি। এ নিয়ে এলাকায় কানাঘুঁষা হচ্ছে। যারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী তারা আজ ভাতা থেকে বঞ্চিত। অথচ তারা সুস্থসবল মানুষ কাজ করতে পারে তাদের নামে কেন এ ভাতা। এ ব্যাপারে আমি সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আমি চাই দ্রুত তালিকা থেকে তাদের নাম বাতিল করা হউক এবং প্রতারণা করে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

তিয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধী না হয়েও স্বামী-স্ত্রীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি খুবই অন্যায় হয়েছে। তাদের নাম অচিরেই বাতিল করা হবে।’

ভাতা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ জামান আহমেদ জানান, প্রতিবন্ধী না হয়েও যদি স্বামী-স্ত্রীর নামে ভাতা থাকে তাদের নাম বাতিল করা হবে এবং প্রতারণা করে ভাতা উত্তোলনের দায়ে আইনি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।