স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রীর যুদ্ধ, দাঁড়িয়ে দেখছেন সবাই

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামের এক যুবকের উপর হামলে পড়েছে খুনিরা। তাও জনবহুল কলেজ গেট এলাকায়। শত শত মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে। এ সময় অনেককে দেখা গেছে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে। দাঁড়িয়ে থাকারা প্রায় সবাই যুবক। অথচ এ সময় কেউ এলো না বাঁচাতে! বরং হামলা শেষে একজন এগিয়ে এসে খুনিদের পালিয়ে যেতে ইশারা করল।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অসীম ভালোবাসা আরেকবার প্রত্যক্ষ করল মানুষ। সবে বিয়ে হয়েছে। হাতের মেহেদী হয়ত এখনও শুকায়নি। কে জানত, স্বামীর রক্তে সে মেহেদীর রঙ আরও রাঙা হয়ে উঠবে!
প্রাণের স্বামী রিফাতকে বাঁচাতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নি। যেন সর্বহারা এক পাগলিনীর গগনবিদারী আর্তনাদ। বাঁচাও বাঁচাও। বাঁচাতে আসেনি কেউ। বাঁচাতে পারেনি সেও। যেন নিরস্ত্র নারীর কিছুই করার ছিল না খুনিদের সামনে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রিফাতের মৃত্যু হয়।

এদিকে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপাতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

এ বিষয়ে বরগুনা থানার ওসি আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান চলছে, শিগগিরই খুনিদের গ্রেফতার করবে পুলিশ।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ।