বিশ্ব ক্ষুধার্ত থাকলে রাশিয়ার কিছু যায়-আসে না: যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি সরে এসেছিল রাশিয়া। মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে এবং ইউক্রেনীয় শস্যের পরিবহনে রাশিয়ার আরোপিত অবরোধ এই বছরের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সৃষ্টি করেছিল।
আর তাই জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, বিশ্ব ক্ষুধার্ত থাকলে রাশিয়ার কিছু যায়-আসে না। আজ ২ নভেম্বর (বুধবার) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট লাঘবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়া উন্নয়নশীল বিশ্বকে ‘ক্ষুধার্ত’ করবে এবং এমন পদক্ষেপের জন্য মস্কোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া গত জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির অন্যতম তত্ত্বাবধানকারী ও অংশীদার দেশ তুরস্ক। চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। সোমবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হালুসি আকার এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসার সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। এটা এমন এক পদক্ষেপ, যার ফলে কেউই লাভবান হবে না।’
এমনকি রাশিয়া চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ায় বুধবার থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে আঙ্কারা।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘এই (শস্য রপ্তানির) উদ্যোগকে ব্যাহত করার জন্য ক্রেমলিনের যে কোনও সিদ্ধান্ত মূলত এমন একটি বিষয় যা মস্কো পাত্তা দেয় না।’
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ব ক্ষুধার্ত হলে তাতে মস্কোর কিছু যায়-আসে না। মানুষ না খেয়ে থাকলেও মস্কোর কিছু যায়-আসে না। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করলেও মস্কো সেটা পাত্তা দেয় না।’
প্রাইস বলেন, চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ‘আমাদের জন্য যা দরকারী বলে তিনি মনে করবেন’ সেটিকেও সমর্থন করবে ওয়াশিংটন।
রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।
এর মধ্যে সম্প্রতি অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য চুক্তি স্থগিত করে রাশিয়া। একইসঙ্গে গত সোমবার ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।
পরে দেওয়া এক বক্তৃতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করেন। আর পুতিনের এই দাবিকে রাশিয়ার ‘চাঁদাবাজি’ বলে আখ্যা দেন প্রাইস।
তিনি জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, চুক্তির পর ইউক্রেন থেকে প্রায় ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন শস্য পাঠানো হয়েছে। বৈশ্বিক রুটির ঝুড়ি বলে পরিচিত এই দেশটিতে আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাওয়া খাদ্যের মূল্যকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে এই চুক্তি।
প্রাইস বলছেন, ইউক্রেন থেকে সরবরাহ করা ‘প্রতি আউন্স’ খাদ্যও বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষকে উপকৃত করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন