এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা কেন এত কম?

বাংলাদেশের তিনশোটি আসনের সব কটিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাদ দিয়েছে প্রধান নির্বাচন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ‘ইলেকশন ওয়ার্কি গ্রুপ’ (ইডাব্লিউজি)।

অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থার এই জোট জানিয়েছে, তাদের মধ্যে যে ২২টি সংগঠনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাজ করার কথা ছিল, তার ১৫টিই আর এই কাজ করতে পারছে না। কারণ সরকারের এনজিও এ্যাফেয়ার্স ব্যুরো থেকে এসব সংগঠনকে এই কাজে বিদেশি তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়নি।

ইডাব্লিউজি’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপের প্রধান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিবিসিকে জানিয়েছেন, শুরুতে তাদের পরিকল্পনা ছিল পনের হাজার পর্যবেক্ষককে তিনশোটি আসনে পাঠানো হবে। প্রতিটি আসনে ৫০ জন করে পর্যবেক্ষক এই কাজে অংশ নেবেন। কিন্তু এখন নির্বাচন পর্যবেক্ষকের সংখ্যা নেমে এসেছে পাঁচ হাজারে।

বাংলাদেশে এবার যেহেতু একটি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে, তাই সেখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল।

কারা আছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপে?

বাংলাদেশে অতীতের নির্বাচনগুলোতেও ইলেকশন ওয়ার্কি গ্রুপ পর্যবেক্ষণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এটি মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি জোট, যারা জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাজে যুক্ত হয়। বেশিরভাগ সংস্থাই বিদেশি অনুদান নির্ভর।

ইডাব্লিউজি সূত্রে জানা গেছে, তাদের জোটের কিছু সদস্য সংস্থার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে জোরালো আপত্তি তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ডেমোক্রেসি ওয়াচ এবং খান ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান। ড: নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ জানান, মোট নয়টি সংগঠনের ব্যাপারে ‘ব্ল্যাক বল’ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

তবে শেষ পর্যন্ত ইডাব্লিউজি’র ২২ টি সংগঠন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি পায়। কিন্তু কার্যত এর মধ্যে কেবল সাতটি প্রতিষ্ঠানই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, “নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজটি খুবই ব্যাপক এবং দুরূহ একটি কাজ। যেহেতু পনেরটি সংগঠন বিদেশি অনুদান নিতে পারছে না, কাজেই তাদের পক্ষে পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে না। হাতে পর্যাপ্ত সময়ও আর নেই। কাজেই ইডাব্লিউজি’কে সীমিত পরিসরেই পর্যবেক্ষণের কাজটি করতে হবে।”

কেন এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো ১৫টি সংগঠনকে বিদেশি তহবিল ব্যবহারের অনুমতি দেয় নি সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা আসলে এখনো জানি না কেন এটা হয়েছে। এনজিও ব্যুরোর চিঠি পেলে হয়তো বিষয়টি পরিস্কার হবে। মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণেই এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন করা থেকে বিরত থেকেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট এজেন্সীগুলোর মতামত চায়। যেমন স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স এরা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যুক্ত। তবে যেভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার।”

এবার কত বিদেশি পর্যবেক্ষক আসছেন?

বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা অতীতের নির্বাচনগুলোর তুলনায় অনেক কম। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোই সচরাচর বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করতো এবং এজন্যে বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাতো।

কিন্তু এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকক ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আনফ্রেল নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষকরা ভিসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে না।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছেন, তারা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার। নির্বাচন কমিশন নিজেই সার্কভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর মধ্যে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ছাড়া বাকী দেশগুলো থেকে ১২ জন পর্যবেক্ষক আসছেন।

এর বাইরে কমনওয়েলথ হতে দুজন, ওআইসি থেকে দুজন, নেপাল থেকে দুজন এবং দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর ১০ জন পর্যবেক্ষক ঢাকা আসছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য।

ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। মোট ১১টি বিদেশি মিশনের ৬৪ জন বিদেশি কূটনীতিক এবং ৬১ জন স্থানীয় কর্মকর্তা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দলটি হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাসের ৩২ জন মার্কিন কর্মকর্তা এবং ৩৩ জন স্থানীয় কর্মকর্তা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

ব্রিটিশ দূতাবাসের ৮ জন ব্রিটিশ এবং ১০ জন স্থানীয় কর্মকর্তা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। জার্মান দূতাবাস থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন ৬ জন জার্মান এবং ২ জন স্থানীয় কর্মকর্তা।