‘আব্বা গো তোর আল্লাহ’র দোহাই ছাড়ি দে’ বলেও রক্ষা পাননি সেই গৃহবধূ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় দেশ। ঘটনার সময় গৃহবধূ বারবার মিনতি করেও রেহাই পাননি।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।

দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী, বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর। ছাড় পায়নি ওই নারী। তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে।

ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক নারী সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় গোঙাচ্ছে, কাঁদছে; সেই সঙ্গে বলছে
-বাবা গো আমাকে ছেড়ে দে। “আব্বা গো তোর আল্লাহ’র দোহাই ছাড়ি দে!”

আশপাশের ২০-২৫ বছরের ছেলেগুলো হায়েনার মতো হাসছে আর বলছে
-উল্টা, উল্টা, উল্টা!

কারণ বিবস্ত্র ওই নারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছিল আর বলছিল
– এরে আব্বা গো, তোগো আল্লাহ’র দোহাইরে।

ভিডিওটার পুরো সময়টায় ওই নারী গোঙাচ্ছিল, কাঁদছিল আর বলছিল

– বাবা গো, ছাড়ি দে।

নির্যাতনের এ ঘটনার ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫)। মামলার প্রধান আসামি বাদল এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত র‌্যাব-১১-এর নিরবচ্ছিন্ন সাঁড়াশি অভিযানে বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এবং দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক আসামিকে রবিবার বিকেল ৪টায় এবং অপর আসামিকে রাত ১১টায় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তারা হলেন- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আব্দুর রহিম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার রহিম, বাদল, কালামসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে গৃহবধূর বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূ অনৈতিক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এনে নির্যাতন চালান। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’

বেগমগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ জানায়, বিষয়টি নজরে এলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পরে গতকাল সন্ধ্যায় নির্যাতিত গৃহবধূকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।