নিতে পারলেন না টিকা

এখনো জীবিত, আছে জাতীয় পরিচয়পত্র তবে সার্ভারে ‘মৃত’ সুমিত্রা

কাজের সন্ধানে আট বছর আগে পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় চলে আসেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর খামারপাড়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি গোপাল চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রী সুমিত্রা রাণীর পরিবার। সেখানে অন্যের জায়গায় ঘর তুলে কোনোরকমে দিন কাটছিল। মাস ছয়েক আগে স্বামী মারা যাওয়ায় বিপদে পড়েন সুমিত্রা রাণী।

পরিবারের অসহায় অবস্থা দেখে পৌর এলাকার আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী ভিত্তিতে সুমিত্রাকে আয়া পদে চাকরী দেয়। সেখান থেকে পাওয়া তিন হাজার টাকায় কোনোরকম দিন চলছে তাদের।

বর্তমান করোনার প্রতিষেধক হিসেবে সবাইকে টিকা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে মৃত দেখানোয় জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও করোনার টিকা দিতে না পরায় চাকরী হারানোর আশংকায় এই নারী।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন করেন সুমিত্রা রাণী। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য সংগ্রহকারীরা ভুলবশত তাকে ‘মৃত’ উল্লেখ করেন। ফলে ভোটার তালিকা থেকেও তার নাম কাটা পড়ে।

সুমিত্রা জানান, তিনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন সেখানে টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে। এজন্য সম্প্রতি টিকার নিবন্ধন করতে স্থানীয় একটি কম্পিউটার সার্ভিসের দোকানে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ইসির তথ্যভান্ডারে তাকে মৃত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। পরে বেড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হন। বেড়া ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার গিয়ে তার সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তিনি টিকাগ্রহণের জন্য নিবন্ধনও করতে পারছেন না।

আলহেরা একাডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবির বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকাগ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। সবাই টিকা নিলেও ইসির তথ্যসংগ্রহকারীদের ভুলে সুমিত্রা রাণী টিকা নিতে পারছেন না। এ বিষয়টি তারা জানেন। সুমিত্রার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করা হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ইসির ডেটাবেইজে সুমিত্রা রাণীকে মৃত দেখানো হচ্ছে। ২০১৯ সালে তথ্য হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীদের ভুলে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, সুমিত্রা রানীকে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইসি বরাবর ভুল সংশোধনের জন্য একটি আবেদন জমা দিতে হবে। এ আবেদন পেলেই তারা সেটি ইসির প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেবে। ভুলটি দ্রুতই সংশোধন হবে বলে আশা করছি।