এ কেমন নিষ্ঠুরতা! টাকা খরচের ভয়ে মেয়েকে হত্যা করলেন পাষণ্ড মা!

যুক্তরাষ্ট্রের মিশৌরি অঙ্গরাজ্যের ওজার্ক কাউন্টিতে এক কিশোরী মেয়েকে হত্যা করেছেনে তার মা! গত সোমবার রেবেকা রুড নামের ওই পাষণ্ড মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর এনডিটিভির।

তার বিরুদ্ধে নিজের ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সাভান্নাহ লেকিকে ভরণ-পোষণের ভয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জন্মের পরপরই মেয়েটিকে দত্তক দিয়ে দিয়েছিলেন ওই মা। মিনেসোটার এক দম্পতি মেয়েটিকে দত্তক নেয়।

এরপর থেকে তাদের সঙ্গেই বেড়ে উঠছিল মেয়েটি। কিন্তু ২০১৬ সালে তার পালক বাবা-মা বিয়ে বিচ্ছেদ করেন। এরপর পালক মা-র নতুন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মেয়েটির বনিবনা হচ্ছিল না।

অবশেষে ২০১৬ সালের নভেম্বরে রেবেকা রুড তার মেয়েকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনেন। রেবেকা রুড মাঝেমধ্যেই ওই পালক বাবা মার বাড়িতে মেয়ে সাভান্নাহ লেকিকে দেখতে যেতেন।

পেশায় ট্রাক ড্রাইভার এবং স্বেচ্ছাসেবী অগ্নিনির্বাপক রুড আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের থিওডোসিয়া নামের এলাকায় ৮১ একরের একটি খামারে বাস করতেন। যা বাঁধানো পাকা রাস্তা থেকে বেশ কয়েক মাইল ভেতরে ছিল।

ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিগুলো দেখে মনে হয়েছিল মেয়েকে ফিরে পেয়ে রেবেকা রুড বেশ সুখেই আছেন। কিন্তু বাস্তবে মেয়েটির জীবনে নেমে এসেছিল নিপীড়নের খড়গ!

পুলিশি তদন্তে বের হয়ে এসেছে মেয়েটিকে শুধু ঘরে রেখেই পড়াশোনা করানো হত। এবং সামাজিক মেলামেশা করতে দেওয়া হত না। একপ্রকার বন্দি জীবন যাপন করত সে।

মেয়েটির মা রেবেকা রুড এবং তার বয়ফ্রেন্ড বাস করতেন একটি রুপান্তরিত ধাতব ভবনে। আর মেয়েটি থাকতো ক্যাম্পিং বা ভ্রমণের সময় বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন একটি ক্যাম্পার ভ্যানে! যেখানে ছিল একটি ভাঙ্গা এয়ার কন্ডিশন! আর একটি জেনারেটর এবং একটি পানির পাম্প।

কিন্তু মেয়েটি এতে সন্তুষ্ট ছিল না। আর তাতেই তারা মা খেপে যানা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তার মেয়ের ভরণ-পোষণের বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন। এবং এই ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলেন মেয়েকে ঠিক মতো ভরণ-পোষণ দিতে গেলে তার খামারটিও বেঁচতে হতে পারে।

এমনকি মেয়ের ভরণপোষণ নিয়ে তার উদ্বেগের বিষয়টি তিনি মেয়েটির সেই পালক মাকেও জানান। জুনের শেষে তিনি সাভান্নাহর পালক মাকে লেখেন, মেয়ের যত্ন নিতে আমার আর্থিক সহায়তা দরকার। আর নয়তো আমি কিছুই করতে পারব না।

ওই চিঠি লেখার এক সপ্তাহ পরই মেয়েটি নিখোঁজ হয়। এরপর ১৮ জুলাই পাহাড়ের ওপর অবস্থিত তাদের সম্পত্তিতে আগুন লাগার খবর দিলে অগ্নিনির্বাপকরা গিয়ে আগুন নেভায়।

আগুন নেভানোর পর অগ্নিনির্বাপকরা ওই পরিবারের অস্থায়ী আবাসস্থলে আসেন এবং পানি খেতে চান। কিন্ত রেবেকা রুড তাদেরকে পানি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে তার মেয়ের শরীর আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলেন। যে ওই ক্যাম্পারে শুয়ে আছে। ফলে পানি আনতে গিয়ে তাকে বিরক্ত করা যাবেনা।

রুড কাউকেই সাভান্নাহর ক্যাম্পারের কাছেও ঘেঁষতে দিচ্ছিলেন না। এর দুদিন পরই রুড পুলিশকে জানান তার মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে। এবং তার পছন্দের বালিশ, কম্বল এবং কালারিং কিটও পাওয়া যাচ্ছে না।

রুড পুলিশকে বলেন, তার মেয়ে নিজেই নাকি নিজেকে ওই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করছিল। আর এ কারণেই হয়তো সে পালিয়ে গেছে বলে তার ধারণা। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ হলে মেয়েটির খোঁজে মাঠে ও জঙ্গলে খোঁজাখুঁজি করা হয়। হেলিকপ্টার ও প্লেন থেকে নিচে দেখা হয়। মেয়েটির নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পোস্টারও ছাপানো হয়।

২৪ জুলাই রুড তার মেয়ের কম্পিউটারটি স্থানীয় ফায়ার ডিপার্টমেন্টে নিয়ে আসেন। এবং টেকনিশিয়ানকে সেটি পরীক্ষা করে দেখতে বলেন কোনো সমস্যা আছে কিনা। আর তাতেই কাউন্টি শেরিফের ডেপুটির সন্দেহ আরো গাঢ় হয়।

একই দিনে রুডের এক সাবেক বয়ফ্রেন্ড পুলিশকে জানান তিনি ওই মেয়েটিকে একবার নিজের হাত কেটে ফেলকে দেখেছেন। আর রুড সেই কাটা হাতে অ্যালকোহল ও লবণ দিয়ে প্রতিদিন ঘষাঘষি করে নির্যাতন করত।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রুড স্বীকার করেন তিনি মেয়েকে শুকর বিচরণের কাঁদামাটিতে ফেলেও মারধোর করেছেন। এমন আরো নানা উপায়ে নির্যতন করেছেন মেয়েকে।

এরপর ৪ আগস্ট পুলিশ ওই খামারে কুকর দিয়ে তল্লাশি চালায়। সে সময় রেবেকা রুড ও তার বয়ফ্রেন্ড রবার্ট পি জুনিয়র বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ১০০ মাইল দূরে সামারসভিলে গিয়ে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন সেদিন।

ওদিকে পুলিশ ওই খামার বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে মেয়েটির পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেহাবশেষের অংশ বিশেষ উদ্ধার করেন। ফের ৯ আগস্ট পুলিশ ওই খামার বাড়িতে যান। তখনও রুড ও তার স্বামী বাড়ি ফেরেনি। সেদিন পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আরও কিছু প্রমাণ উদ্ধার করেন।

ওদিকে রুড ও তার স্বামী সোমবার বাসে করে ওই অঙ্গরাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বাসের টিকেট কিনেছেন বলে জানতে পারে পুলিশ। আর তখনই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার রেবেকার রুডের বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় মাত্রার খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন সাক্ষ্য প্রমাণ গোপন এবং মৃতদেহের সৎকার না করার অভিযোগ না আনা হয়। ওজার্ক কাউন্টি শেরিফ বা পুলিশ প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি ওই নিষ্ঠুর মাকে নিজের মেয়েকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করতে চান।