খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়িতে সেটলার কর্তৃক আবারো পাহাড়িদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলা মাইসছড়িতে সেটলার কর্তৃক আবারো পাহাড়িদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থরা। দফায় দফায় হামলা ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী অনেকবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

মাইসছড়ি ইউনয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মানিকছড়ির পাঁচ একর নামক স্থানে সেনা-পুলিশের সহযোগীতায় সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ৪টি ঘর ভেঙে দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র লুটের অভিযোগ উঠেছে।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মানিকছড়ির পাঁচ একর নামক স্থানে সেনা-পুলিশের সহযোগীতায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক আবারো পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার(৪ঠা মে ২০২৩) রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া পর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা হলেন- ১. বিন্দু চাকমা(৪৫), ২. সুমন চাকমা(২৪), ৩. দক্ষ চাকমা(৩৫) ও ৪) জ্ঞানময় চাকমা(৪২)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার সময় মো: রসুল আলী, জয়দার ও গোয়ামারা(ডাক নাম, আসল নাম জানা যায়নি)সহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকজন সেটলার বাঙালি সেনা-পুলিশের সহযোগীতায় মানিকছড়ির পাঁচ একর নামক জায়গায় গিয়ে উক্ত পরিবার ৪জন পাহাড়ি গ্রামবাসীর ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয় এবং ঘরের জিনিসপত্র দা, কুড়াল, মোবাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও নগদ প্রায় ৫২হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় উপস্থিত সেনা-পুলিশ সদস্যদের নির্দেশে সেটলাররা পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে শুক্রবার(৫ই মে) সকালে মহালছড়ি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী পাহাড়িদের ডেকে লুট করা মোবাইলগুলো ফেরত দিলেও অন্যান্য জিনিসপত্র ফেরত দেওয়া হয়নি বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এ সময় পুলিশ সহজ-সরল পাহাড়িদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ‘তারা(পাহাড়িরা) আর সেখানে ঘরবাড়ি তুলবে না ও জুম চাষ করবে না’ এমন ¯^ীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও ধারণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।মহালছড়িতে সেটলার কর্তৃক এক পাহাড়ির বাড়িতে হামলা, প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষে াভ
এর আগে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জামতুলি গ্রামের বাসিন্দা শান্তি বিকাশ চাকমার বাড়িতে সেটলার বাঙালিরা হামলা চালানো অভিযোগ পায়। গত মঙ্গলবার(২৫শে এপ্রিল ২০২৩) সন্ধ্যায় উক্ত হামলার ঘটনা ঘটে বলে গ্রামবাসীরা জানান।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার সময় সেটলার বাঙালি মো: জাহেদুল, মো: সাদ্দাম, মো: বদি, মো: আমিনুল ও মো: সাইদুল গংরা অতর্কিতভাবে জামতুলি গ্রামের বাসিন্দা শান্তি বিকাশ চাকমার বাড়িতে হামলা চালায় ও তাকে মারধর করে। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে গত বুধবার(২৬শে এপ্রিল ২০২৩০ দুপুর ১টার সময় এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এলাকাবাসী এই হামলার ঘটনাকে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত মাইসছড়ি এলাকায় সেটেলার বাঙালিরা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষপরোক্ষ মদদে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে যাচ্ছে। পাহাড়িদের ওপর এ পর্যন্ত বহু হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেেলা জড়িত সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে তারা বার বার পাহাড়িদের উপর হামলা ও ভূমি বেদখলের সাহস পাচ্ছে। এলাকাবাসী অবিলম্বে শান্তি বিকাশ চাকমার বাড়িতে হামলাকারী সেটলারদের আইনের আওতায় এন দৃষ্টিান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

মাইসছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজাই মারমা জানান, মানিকছড়ির পাঁচ একর নামক স্থানে এর আগেও অনেকবার সেটেলাররা অন্যায় অবৈধ জায়গা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। বারে বারে যারা অশান্ত করতে চাই তাদেরকে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। বাব-দাদার চৌদ্দ গোষ্টির আগে থেকে জুম ও বাগান-বাগিচা চাষ অব্যাহত অবস্থায় প্রথাগত নিয়মে এটি পাহাড়িদের ভোগ দখলীয় জায়গা বলে প্রতীয়মান হয়।
মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আবুল হাসান খান জানান, ঘটনা শুনার সাথে সাথে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছি। পাহাড়ি-বাঙালি উভয়কে যার যার জায়গা শান্ত থাকতে বলেছি। শান্তি পরিবেশকে অশান্ত চেষ্টা করা হলে আইন তার ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য, উক্ত স্থানে জন্য এর আগেও বেশ কয়েকবার সেটলার বাঙালিরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে জায়গাটি বেদখলের চেষ্টা চালিয়েছিল। প্রশাসন সেটলারদের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তারা নানাভাবে পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে।