খাগড়াছড়িতে বৈসাবির পর মুসলামানদের খুশির জমজমাট ঈদ-উল ফিতর কেনাকাটা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আর মাত্র ক’দিন পরই মুসলামানদের খুশির ঈদ, ঈদ-উল ফিতর। হাতে সময় খুবই কম। এর মধ্যে খুঁজে নিতে হবে পছন্দের পোশাকটি। ক্রেতারাও অনেকটা আদাজল খেয়ে নেমেছেন। অনেকে আবার মনের মতো পোশাক বানাতে ছুটছেন দরজিবাড়ি। সেখানেও শেষ মুহূর্তে ব্যস্ততা।

বৈসাবি/বৈশাখ ও ঈদ ঘিরে জেলা শহরের মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে শহরবাসীর কেনাকাটার ধুম শুরু হয়েছে। রোজার মাঝামাঝি সময়ে প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা শুরু হলেও এবার রমজানের শুরু থেকেই মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এপ্রিলের ২য় সপ্তাহে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি পালিত হয়। আর কয়েকদিন বাদে রয়েছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে জমজমাট সব ধরনের কেনাকাটা। তাদের ধারণা এবার রেকর্ড কেনাকাটা হবে।

গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তৈরি পোশাক মাঝবয়সী নারীদের পছন্দের তালিকায় থাকলেও থান কাপড়ের দোকানে তরুণীদের ভিড় বেশি। সেলাই করা থ্রিপিস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ৮হাজার টাকার মধ্যে। সেলাইবিহীন সুতি থ্রিপিসের দাম ৪৫০ থেকে ৩হাজার টাকা। এ ছাড়া জমকালো কাজ করা দেশি-বিদেশি থ্রিপিসের দাম ২হাজার টাকার ওপরে। বৈসাবির কেনাকাটার পর ঈদ কেনাকাটার বাজারে সুতি, লিনেন, সিল্ক, জর্জেট, কাতান ও নেট কাপড়ের বিক্রিও ভালো বলে জানালেন দোকানিরা। এসব কাপড় প্রতি গজ ৬০টাকা থেকে ১ হাজার ২০০টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই সরকারী-বেসরকারী চাকুরিজীবিরা পেয়েছেন বেতন ও বোনাস। এ অবস্থায় চলতি মাসের শুরু থেকে দেশে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা। মানুষজন মার্কেটে কেনাকাটার জন্য ছুটছেন। কিনে আনছেন পছন্দের জামা, কাপড়, শাড়ি, থ্রি পিসসহ যাবতীয় পোশাক-সামগ্রী।

রাজধানীর প্রধান প্রধান বিপণি বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন নগরবাসী। শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও আকর্ষণীয় অফার দিয়ে দেশী ও বিদেশী ফ্যাশন হাউসগুলো হুলুস্থূল ফেলে দিয়েছে। তরুণ-তরুণী, কিশোর, বৃদ্ধা সবাই বৈশাখী কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাজারে কথা হয় পানছড়ি থেকে আসা আয়ুশী, রেশমী ও সাফিয়াসহ একদল তরুণীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, ১১জন বান্ধবি মিলে এবারের ঈদ উৎসবে একই ডিজাইনের নেটের গজ কাপড়ের পোষাক সেলাই করবেন। তিন ঘণ্টা সারা বাজার ঘুরে তাঁরা পছন্দের কাপড় কিনেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে এসে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে তাঁদের সেলাইয়ের দামও দিতে হবে বেশি।
শহরের খাগড়াপুর এলাকার ফেমি টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী বীণা ত্রিপুরা জানান, ‘৯ই এপ্রিল থেকে অর্ডার(ফরমাশ) নেওয়া বাদ দিয়েছি। সকাল থেকে রাত অবধি দোকানের চারজন কর্মী মিলে সেলাই করছেন। সেলাইয়ের ধরন ও সময় বুঝে নিচ্ছেন বাড়তি দামও।’

দীঘিনালার বড়াদাম এলাকার এক শিক্ষিকা বলেন, কাপড় পছন্দ হচ্ছে তবে দাম বেশি। পনেরো দিন আগেও কাপড়ের এমন দাম ছিল না।

খাগড়াছড়ি বাজারের শাড়ি, থ্রিপিস ও থান কাপড়ের দোকান আমন্ত্রণ ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো: শাহ আলম বলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে ভেবেছিলাম বেচা-বিক্রি হবে না, সে জন্য মালামালও তেমন নিয়ে আসেনি। তবে গত চার-পাঁচ দিন লোকজন আসা শুরু করেছে। থ্রিপিসের চেয়ে রেডিমেইট কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। শাড়িও বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি।’

শহরের কল্যাণপুর এলাকার নাসিমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ এসেছেন তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে। তিনি জানান, প্রতিবারই ঈদ আসলে সন্তানেরা আবদার করেন নতুন পোশাকের জন্য। তাই তিনি প্রতিবছর সবার জন্য ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক কেনেন।

দর্জিপাড়ায় পোশাক বানানোর ধুম:- ঈদকে সামনে রেখে সব প্রস্তুুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষজন। নতুন পোশাক আর হরেক রকমের কেনাকাটায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে শহরজুড়ে। আর অনেকেই পছন্দের কাপড় কেনাকাটা শেষে তা বানাতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন দর্জির দোকানগুলোতে। দর্জির দোকানগুলোতে যন্ত্রের শব্দ যেন জানান দিচ্ছে ঈদ আসতে আর দেরি নেই। শব-ই-বরাতের আগ থেকেই নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিপাড়ার কারিগররা। ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে তাদের এই ব্যস্ততা। রোজার প্রথম দিকে কাজের চাপ কম থাকলেও এখন দিন-রাত দর্জিপাড়ার কারিগরদের চোখে যেন ঘুম নেই। এই কারিগররা তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নানা নক্সার পোশাক তৈরিতে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। কারও সঙ্গে কারও কথা বলারও ফুরসত নেই। কারও গলায় ফিতা, কারও হাতে কাঁচি আবার কেউবা জামা সেলাই করছেন। যেন দম ফেলারও সময় নেই তাদের। গ্রাহকদের মাপ অনুযায়ী সালোয়ার, কামিজ, শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মজুরির বিনিময়ে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। অনেকে নিজেদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে করতে পারছেন না ঈদের কেনাকাটা। পোশাক তৈরির এই উপার্জন দিয়ে সংসার চলে তাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় তৈরি কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের শব্দ একটানা একঘেয়ে, নাকি ছন্দময় তা চিন্তারও সুযোগ নেই তাদের। পোশাক কারিগররা জানিয়েছেন, সারা বছরে যে কাজ করেন তার চেয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে হয় বিভিন্ন উৎসবে। বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা সারা বছরের চেয়ে বেশি উপার্জন করেন। যখন অতিরিক্ত গ্রাহক আসে তখন অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিলেও গ্রাহকরা তা শুনতে চান না। কারণ এত পোশাক তৈরি করে তারা নির্দিষ্ট সময়ে দিতে পারবেন না। নতুনদের ফিরিয়ে দিলেও পুরনোদের ক্ষেত্রে তা পারেন না। কারণ তারা তাদের সারা বছরের বাধা গ্রাহক।

অনেক কারিগর আছেন ঈদের দিনেও পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। এমন পরিস্থিতির ভেতর থেকে তারা ঈদের দিনেও যেতে পারেন না বাড়িতে। ঈদ কাটানো হয় না প্রিয়জনদের সঙ্গে। অন্যের নতুন পোশাক তৈরির মাধ্যমেই তারা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। বেশিরভাগ কারিগর ঈদের পরের দিন বাড়িতে যান।