প্রতিবাদে ধর্মঘট, পিসিএনপির নিন্দা

খাগড়াছড়ির রামগড়ে ইউপিডিএফের কর্মী হামলায় ২ চালকসহ আহত-৩

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় ইউপিডিএফের প্রসিত গ্রুপের কর্মীদের হামলায় ২জন সিএনজি চালক ও একজন কৃষি শ্রমিক গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সিএনজি চলক সমবায় সমিতি রোববার(১২ ফেব্রুয়ারী) উপজেলার তিনটি সড়কে ধর্মঘট পালন করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার(১১ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে রামগড় উপজেলার প্রেমতলা নামক স্থানে ইউপিডিএফের প্রসিত গ্রুপের এক অস্ত্রধারী কর্মী মোবাইল ফোনে কল করে ডেকে নিয়ে সিএনজি চালক মো: আবুল কালাম(৫৫) ও মো: সাইফুল ইসলাম(২৮) কে অমানুষিকভাবে বেদম প্রহার করে আহত করেছে। তারা দুজন সম্পর্কে জামাই-শ্বশুর এবং উপজেলার কাশিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় আহত ৩জনই বর্তমানে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতরা হলো নুরপুর এলাকার সাইফুল ইসলাম(২৮), বল্টুরাম টিলার বাসিন্দা সিএনজি চালক মো: আবুল কালাম(৫৫) ও বল্টুরাম টিলার সাইফুল ইসলাম(২২)।

আহত সাইফুল বলেন, প্রতিদিনের মত জঙ্গলে বন্যা মোরগ ধরতে গেলে কিছু উপজাতীয় যুবক আমাকে ধরে অহেতুক পিটিয়ে জখম করে আন্তুুপাড়াতে নিয়ে আটকে রাখে। আরেক আহত ব্যক্তি আবুল কালাম জানান ইউপিডিএফ এর এরিয়া কমান্ডার সজল আমাকে আর আমার মেয়ের জামাইকে ফোন করে প্রেমতলা যেতে বলে। তার কথামত প্রেমতলাতে গেলে আমাদের আটক করে বেদম পেটাতে থাকে। আমরা কারন জানতে চাইলে আরো বেশি পেটাতে থাকে। পিটিয়ে তাদের তিনজনকে ছেড়ে দিলে লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে।

হাসপাতলে গিয়ে দেখা যায়, আহত তিনজনের পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে শক্ত লাঠির প্রচন্ড আঘাতে কালো চিহৃ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যথায় তারা হাসপাতালের বেডে কাঁতরাচ্ছেন। এ ঘটনায় গ্রামবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃস্টি হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সিএনজি চালক মো: আবুল কালাম বলেন, বিকেল ৩টার দিকে তার মেয়ের জামাই সাইফুল ইসলামকে ইউপিডিএফের কর্মী সজল ত্রিপুরা মোবাইল ফোনে কল করে তাদের দুজনকে প্রেমতলায় ডেকে নেয়। তারা ভাড়া করা মোটর সাইকেলে করে প্রেমতলায় গেলে ইউপিডিএফ কর্মী সজল ত্রিপুরা প্রথমে আবুল কালামকে মন্দিরের সামনে নিয়ে চোখমুখ বেধে শক্ত লাঠি দিয়ে এলোপাথারি পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় ওই কর্মী। পরে তার মেয়ের জামাইকে ঐ স্থানে নিয়ে একইভাবে বেদম প্রহার করে।

এসময় ইউপিডিএফ কর্মী সজল তাদের কছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। একই সময়ে ঐ কর্মীরা কৃষি শ্রমিক মো: সাইফুল(২২) জানান, ইউপিডিএফ কর্মী সজল বেলা আড়াইটার দিকে নুরপুর থেকে তাকে একটি মোটর সাইকেলে জোর করে তুলে প্রেমতলায় নিয়ে যায়। সেখানে চোখমুখ ও হাত বেধে প্রচন্ড পিটায় ইউপিডিএফ কর্মী সজল। তিনি নুরপুর গ্রামের মৃত: শামছুল হকের ছেলে। স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রেমতলা থেকে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

আহতদের আরেকজন নুরপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে জঙ্গলে বন মোরগ ধরতে গেলে স্থানীয় কিছু উশৃক্সখল উপজাতি যুবক তাকে কোন কারণ ছাড়াই মারধর করে পাশ্ববর্তী অন্তুপাড়ায় নিয়ে আটকে রাখে।

অপর আহত আবুল কালাম জানান, ইউপিডিএফের কালেক্টর সজল ত্রিপুরা তাকে ও তার জামাতাকে ফোন করে প্রেমতলা যেতে বলেন। এসময় তারা সেখানে গেছে হঠাৎই সজল ও তার সহযোগীরা তাদের আটক করে ব্যাপক মারধর করে। মূলত: আমাদেরকে নিরাপত্তা বাহিনী বিজিবির সোর্স সন্দেহ করে এবং বিভিন্ন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার মিথ্যা অজুহাতে তাদেরকে অমানুষিকভাবে পিটানো হয়।

এরপর ইউপিডিএফ কর্মীরা তাদের সেখানে ফেলে রেখে চলে গেলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাৎখনিক খবর পেয়ে বল্টুরামটিলা এলাকা থেকে ১০-১৫জন যুবক মোটর সাইকেলে করে প্রেমতলায় গেলে পরে আহত তিনজনকে তারা উদ্ধার করে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি করায়।

এদিকে দুই সিএনজি চালককে অমানুষিকভাবে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রামগড়-বৈদ্যপাড়, রামগড় পিলাক ও রামগড় যৌথখামার সড়কে সিএনজি অটোরিকসা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রামগড় সিএনজি অটোরিকসা চালক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হৃদয় রহমান রনি জানান, তাদের দুই সিএনজি চালককে অমানুষিকভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা রোববার সকাল থেকে রামগড়ের তিনটি সড়কে দিনব্যাপী সিএনজি ধর্মঘট পলন করছে।

রামগড় থানার উপ-পরিদর্শক এসআই মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, আহত ৩জনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রামগড় উপজেলা ও পৌর শাখার নেতৃবৃন্দ।