চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নৈশ প্রহরীর ঝুলন্ত লাশ! আত্মহত্যা নাকি হত্যা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্মাণাধীন ভবনের নাইট গার্ড হিসেবে কর্মরত লিটন দাশ (৪৫) নামক এক ব্যক্তির ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে যোগদানের একমাসের মাথায় এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় স্থানীয় প্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আত্মহত্যা বললেও পরিবারের দাবি হত্যা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ফুলতলার উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে নির্মাণাধীন ভবনের আবদ্ধ এক টিনের ঘরের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।ধারণা করা হচ্ছে, আগেরদিন রাতে ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যু হয় তার।

নিহত লিটন দাশ (৪৫) উত্তর কাঞ্চনা ৩নং ওয়ার্ডের ধুপি পাড়ার বাসিন্দা ও হিমাংশু দাশের সন্তান। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।

জানা যায়,কাঞ্চনার গ্রামীণ ব্যাংকের উত্তর পাশে ও আল হারমাইন মাদ্রাসার দক্ষিণে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দারোয়ান বা নাইট গার্ড হিসেবে ১ ডিসেম্বর কাজে যোগ দেন লিটন দাশ।ফলে সেখানে রাত্রিযাপনের জন্য টিনের একটি ঘর দেওয়া হয়। টিনের ঘরেই গেল তার শেষনিঃশ্বাস।রাতে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।সকালে খবর পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এসে টিনের ঘরের দরজা ভাঙ্গে এবং লিটনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।ভিতর থেকে লক করা থাকায় স্থানীয় প্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আত্মহত্যা করেছেন জানালেও পা বাঁধা অবস্থায় থাকায় লিটনের পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মিনহাজ উদ্দীন রিজভী নামক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়,আমরা দেখেছি পুলিশ এসে ভেতর থেকে লক করা টিনের ঘরটি থেকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় লোকটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত লিটনের স্ত্রী বাবলি দাশ বলেন,আমার সাথে কখনো কোনকিছু নিয়ে ঝগড়া মনমালিন্য হয়নি যেটার জন্য আত্মহত্যা করবে।আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে।

নিহত লিটনের ভাইপো নান্টু দাশ বলেন, আত্মহত্যা করলে হাত-পা খোলা থাকতো।হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তো কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না।

লিটনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মিতা দাশ বলেন, ঐখানে প্রতিদিন তার জন্য এখান থেকে খাওয়ার নিয়ে যাওয়া হত।আত্মহত্যা করার মত কোনকিছু হয় নাই।কেউ ইচ্ছে করে তাকে মেরে ফেলেছে।

নির্মাণাধীন ভবনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার জন্য ঘটনাস্থলে সে সময়ে কেউ না থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিন শফি জানান, লিটন আমার এলাকার লোক।সে অত্যন্ত গরীব।একেবারেই দূর্বল শ্রেণির লোক।হয়ত বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সমস্যা মানসিক টেনশন থেকে আত্মহত্যা করছে।

নিহতের পরিবারের দাবি হত্যা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি সদস্য আমিন শফি বলেন, আমরা দেখেছি ভেতর থেকে লক করা টিনের ঘরে সে ফাঁসিতে ঝুলেছে।ঘরটি থেকে বের হওয়ার অন্য কোন পথও নেই।তাছাড়া সে এমন সহজ সরল দরিদ্র পরিবারের মানুষ তার সাথে কেউ শত্রুতা করবে তাও মনে হয় না।তারপরও যদি কোন প্রমাণ বা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এমন কিছু পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।

কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন,সকালে পুলিশের সহযোগিতায় ঘরের দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।সে অত্যন্ত গরীব।মানসিক টেনশন থেকে হয়ত আত্মহত্যা করেছে।

এই বিষয়ে সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউল হক জানান, লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি।ডাক্তারের দেওয়া রিপোর্টের পরে চূড়ান্ত বিষয় জানা যাবে।