চলনবিল থেকে শিকার করা বোয়াল মাছের পোনায় বাজার সয়লাব!

বর্ষায় কানায় কানায় ভরে যায় বৃহত্তর চলনবিল, পানিতে থৈ থৈ করে ওই বিলের বিস্তৃর্ণ প্রান্তর। এ বছর আশানুরূপ পানি নেই। বর্ষার শুরুর দিকে বিভিন্ন নদীর পানির সঙ্গে বিভিন্ন জাতের মাছে পোনা মাছ চলনবিলে প্রবেশ করে। এরমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ছিল বোয়াল মাছের পোনা। এসব পোনা মাছেই বিলের মৎসজীবীদের চাহিদা মেটার কথা। কিন্তু গত এক মাস ধরে যেহারে এসব পোনা মাছ শিকার করা হচ্ছে তাতে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, এভাবে গণহারে পোনা মাছ ধরলে নিকট ভবিষ্যতে দেশি মাছ নাই হয়ে যাবে। দেশি মাছের সংকটে পড়তে হবে চলনবিলসহ দেশবাসীকে।

উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর চলনবিল থেকে শিকার করা বোয়ালের মরা পোনা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, তাজা পোনা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। কাকডাকা ভোর থেকে সিংড়া মৎস্য আড়তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ আসতে শুরু করে। বোয়াল মাছের পোনা গোপণে পাতিলে ও ব্যাগে আড়তে আসে। এরপরে চারিদিকে তাকিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আড়তের পাল্লায় তুলে বিক্রি করে আবার ক্রেতার পাত্রে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩০০টির অধিক চায়না-কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক মাস থেকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার সিংড়া মৎস্য আড়ৎ, দমদমা স্কুল বাজার, বিয়াস বাজার, কলম বাজার, বিলদহর বাজার, চৌগ্রাম বাজার, চকনওগাঁ বাজার, রাখালগাছা বাজারসহ ছোট-বড় বাজারে নিয়মিত উঠছে দেশি জাতের মাছে। সেই সাথে আশঙ্কাজনক হারে বাজারগুলোতে আসছে বোয়াল মাছের পোনা। বাজারে আসা বোয়াল মাছের পোনাগুলো তিন থেকে ছয় ইঞ্চি লম্বা এবং আকারে একেবারেই ছোট। খেতে স্বাদ হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এসব মাছের চাহিদা থাকে বেশি।

কয়েকজন বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলনবিলে এখন পানি নাই বললেই চলে। আমরা যদি এ পোনাগুলো না ধরি আরেকজন ধরবে। আর এ মাছগুলো বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। মৎস্য অফিস থেকে আমাদের নিষেধ করে গেছে তাই গোপণে বিক্রি করছি।

পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, এই মুহূর্তে ছোট মাছ ধরা উচিৎ না। দেশি মাছ আমাদের সম্পদ। এগুলো রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। প্রতিদিন যে হারে বাজারগুলোতে পোনা মাছ আসে এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মৎস্য সংকটে পড়তে হবে আমাদের। তাই দ্রুত পোনা মাছ নিধন বন্ধ করতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, জেলেদের সচেতন করতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। জুন মাস থেকে ১৮টি অভিযানে জরিমানা ও জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল ইমরান বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তরের প্রচারণা ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পোনা মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধে দ্রুত সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।