নওগাঁর রাণীনগরে পশু খাদ্যে ও ওষুধে ভেজালে ভরপুর; দামেও চড়া!

নওগাঁর রাণীনগরে ভেজালে ভরপুর হয়ে পরেছে পশু খাদ্যে এবং ওষুধে। এসব ভেজাল খাদ্য-ওষুধের কারনে একদিকে যেমন পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্য দিকে তুলনা মূলকভাবে কমে যাচ্ছে দুধ ও মাংস উৎপাদন।

এছাড়া গত ৯মাসের ব্যবধানে অনেক খাদ্যে-ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন,ফলে পশু পালনে হিমসিম খেতে হচ্ছে খামারী ও সাধারণ মানুষদের।

উপজেলার বিভিন্ন খামারী ও সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,সরিষা থেকে যে খৈল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশ ভেজালে ভরা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন তারা গরুর সুকনা গোবর,তেঁতুলের বিচি মিশ্রণ করে খৈল তৈরি করছেন।এছাড়া গমের ভূষিতে নিন্ম মানের আটা,ধানের তুষ,খড় মিশ্রন করে ভূষি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। এছাড়া গরু মোটাতাজকরণ ও দুধ উৎপানের ফিট তৈরি হচ্ছে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে। রাইস আতব ব্যান্ডে ধানের তুষ,ডলোচুন,মিশ্রনে তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। যা পশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এছাড়া ভেজালে ভরা খাদ্যের কারনে ক্যালসিয়াম,আমিষসহ বিভিন্ন পুষ্টি ঘার্তিপূরণের পরিবর্তে কিডনি,লিভার,প্যারালাইসিস ও স্টোক জনিত রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন দুধ,মাংস উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে,অন্যদিকে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন পশু পালনকারীরা। খামারীরা বলছেন,পশু খাদ্যের অধিকাংশ বস্তার গায়ে বিক্রিত মূল্য লেখা থাকেনা। ফলে সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের নিকট থেকে ইচ্ছে মতো দাম নিয়ে থাকেন।
পশু চিকিৎসকরা বলছেন,আগে খামার আকারে গ্রামে এতো পশু পালনের প্রচলন ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের বেকার যুবকরা এবং নারীরাও বানিজ্যিকভাবে পশু পালন করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ডিবি, ডিসিপি, মিনারেলস জাতীয় ওষুধ বিভিন্ন কোম্পানীর বোতল/প্যাকেট/মোড়ক হবুহ নকল করে এবং মোটাতাজা করণে স্টেরোয়েট মিশ্রিত ফ্যাটেনিং পাউডার অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার জাত করছেন। ফলে পশুর রোগ প্রতিরোধ বা রোগ নিরাময়ে ওষুধ প্রয়োগ করলেও তুলনা মূলকভাবে কাজ হচ্ছেনা।এসব নকল ওষুধ অল্প টাকায় ক্রয় করে অনেক ভেটেরিনারী দোকানদাররা বেশি মুনাফার লোভে বিক্রি করছেন।

উপজেলার আবাদপুকুর বাজারের পশু খাদ্য বিক্রেতা আল মামুন জানান,গত ৯মাস আগে ভাল মানের সরিষার খৈল প্রতি বস্তা (৩৭কেজি) ছিল এক হাজার ৪০০টাকা,বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০টাকা। গমের ভূষি ছিল প্রতি বস্তা (৩৭কেজি) ছিল এক হাজার ২৮০টাকা,বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮৫০টাকা।গমের আটা প্রতি বস্তা (৪০কেজি) ছিল এক হাজার ১২০টাকা,বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০টাকা বস্তা।আতব ব্যান্ড প্রতি বস্তা (৭৪কেজি) ছিল এক হাজার ৯০০টাকা,বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০টাকা। পশু মোটা তাজা করনের ফিট প্রতি বস্তা (২৫কেজি) ছিল ৯৫০টাকা,বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৮০টাকা।লবন প্রতি বস্তা (৫০কেজি) ছিল ৪৮০টাকা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০টাকা।

অপর দিকে গবাদি পশুর ওষুধ বিক্রেতা রেজাউল করিম টুটুল সহ কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা বলেন,দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানী ভেদে গত ৯মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটারের ক্যালসিয়ামে ৫০/৭০টাকা,জিংক প্রতি লিটারে ৩০/৪০টাকা,এডি ১০০মিলিতে ৫০/৬০টাকা,ফ্যাটেনিং পাউডার প্রতি কেজিতে ১২০/১৩০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।এছাড়া পশু চিকিৎসায় ব্যবহার্য অধিকাংশ ওষুধের দাম বাড়তি মূখে রয়েছে বলে ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
উপজেলার সিলমাদার গ্রামের পশুপালনকারী আব্দুল মান্নান,পারইল গ্রামের আব্দুল মজিদ,মিরাটের ছামছুর রহমানসহ কয়েকজন পশুপালনকারীরা বলেন,সরিষার খৈল পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সেখান থেকে গরুর গোবর,তেতুলের বিচি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া গমের ভূষিতে ধানের তুষ-গুড়াসহ নানান রকম সামগ্রী দিয়ে ভেজাল খাবার তৈরি করে বিক্রি করছে।এছাড়া ভেজাল ক্যালসিয়াম-ভিটামিন খাওয়ালেও তুলনা মূলকভাবে কাজ হচ্ছেনা। তারা বলছেন,এমনিতেই লাগামহীন বাজারে খাদ্য কিনে পশু পালনে হিমসিম খেতে হচ্ছে,তার মধ্যে খাদ্য এবং ওষুধে ভেজালের কারনে চাহিদা অনুযায়ী দুধ এবং মাংস উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ্য হতে হচ্ছে। ভেজাল প্রতিরোধ ও খাদ্য-ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রনে করতে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি বাজারে করা নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর কর্মকর্তা কামরুননাহার আকতার বলেন,ভেজাল ওষুধ এবং খাবারের বিষয়গুলো নিয়ে ইতি মধ্যে মাঠে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা ও খাদ্য বিক্রেতাকে সর্তক করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ভেজাল কারবারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।