‘নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ’ নিয়ে ১৫ আন্তর্জাতিক সংগঠনের উদ্বেগ

নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১৫টি আন্তর্জাতিক সংগঠন বাংলাদেশে রোববারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ব্যাংককভিত্তিক এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (অ্যানফ্রেল) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে শনিবার এই যৌথ বিবৃতি দেয়।

অ্যানফ্রেলও এই ১৫টি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের ‘অগণতান্ত্রিক নির্বাচনী পরিবেশের বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি’ শিরোনামে এই বক্তব্য প্রদান করে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজ, বিরোধী দল, ও গণমাধ্যমের ওপর কঠোর দমন- নিপীড়ন শুরু করেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সর্বতভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।’

এতে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর বিরোধীদের গাড়িবহরে ৩০বার হামলা হয়েছে। ১৫৯টি আসনে ২০৭টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৪৩ প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ যাবৎ বিরোধী দলের ১৭ প্রার্থী আটক হয়েছেন। নির্বাচনী সহিংসতায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৮২ জন।’

বিবৃতিতে বলা হয়, বিরোধীদলের নেতাদের মারধর, দলীয় কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়া এবং নারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে।

‘বাংলাদেশি ভোটারদের মনে ত্রাস সঞ্চার করার জন্য এসব হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে করে নির্বাচনে সমান সুযোগ পাওয়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে,’ জানায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেই একটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না; নির্বাচনী পরিবেশের ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচনের আগে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো এবং গণমাধ্যম নানা বিধিনিষেধের মুখে পড়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ার’ কারণে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এই মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

‘১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলা হয়েছিল মাত্র ৩৪,৮৩৮ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এদের মধ্যে মাত্র ২৬ হাজারকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হবে,’ জানানো হয় বিবৃতিতে।

‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু বলা যাবে না এবং আমরা এর সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি,’ যোগ করা হয় বিবৃতিতে।

যেসব সংস্থার পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো— এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন; এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস; গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ ডোমেস্টিক ইলেকশন মনিটরস; ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস; সেন্টার ফর মনিটরিং ইলেকশন ভায়োলেন্স, শ্রীলঙ্কা; ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক, পাকিস্তান; কোমিতে ইন্দিপেন্দেন পেমান্তো পেমিলি, ইন্দোনেশিয়া; মালাওয়ি ইলেক্টোরাল সাপোর্ট নেটওয়ার্ক, মালাওয়ি; মারুহ, সিঙ্গাপুর; নাশনাল সিটিজেনস মুভমেন্ট ফর ফ্রি ইলেকশনস, ফিলিপাইন; পিপলস এলায়েন্স ফর ক্রেডিবল ইলেকসন্স, মিয়ানমার; পিপলস একশন ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন, শ্রীলঙ্কা; পেরকুম্পুলান উন্তুক পেমিলু দান দেমোক্রেসি, ইন্দোনেশিয়া; ট্রান্সপারেন্সি মালদ্বীপ, মালদ্বীপ; জিম্বাবুয়ে ইলেকশন সাপোর্ট নেটওয়ার্ক, জিম্বাবুয়ে এবং কমিটি ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন্স ইন কম্বোডিয়া, কম্বোডিয়া।