এইচএসসি'তে অকৃতকার্য

নোয়াখালীর চাটখিলে অদম্য জাহিদের বছরে আয় ২০ লক্ষ টাকা

ঘরে ছিলনা কোন বৈদ্যুতিক সুবিধা, গ্রহন করেননি কম্পিউটার বা ফ্রিল্যান্সিং এর উপর কোন প্রশিক্ষণ। এলাকায় ছিল না ওয়াইফাই বা ভালো কোনো ইন্টারনেট সুবিধা। ছিল না ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের ভালো দক্ষতা । এতো প্রতিকূলতার ভেতরেও বছরে পনেরো থেকে বিশ লাখ টাকা আয় করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফূটিয়েছেন নোয়াখালীর চাটখিলের জাহিদ হাসান জয়।

জাহিদ চাটখিল সরকারি পি.জি স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও সে বছর পরীক্ষা দিতে পারেননি। এরপর ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি শেষ করেন। ২০১৩ সালে চাটখিল পাঁচগাও মাহবুব সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাও দুই বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পর বাকি বিষয়গুলোতে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। এভাবেই তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি ঘটে।

জাহিদের বয়স এখন ২৯ । নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার চাটখিল পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুর গ্রামের হোসেন আলী হাজি বাড়ির মো. লোকমান হোসেন ও মারজাহান এর তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান তিনি। বড় সন্তান হওয়ার কারণে কম বয়সে পরিবারের চাপ কিছুটা এসে পড়ে তার ওপর।

২০১৭ সালের দিকে যখন প্রথম ফ্রিল্যান্সিং করে আয় শুরু করেন, তখন তাদের বাড়িতে ছিল না বিদ্যুৎ। যে কারণে এক বছর ধরে কয়েক কিলোমিটার দূরে হালিমা দিঘিরপাড় এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হতো। পরে আরও কয়েক বছর বাড়ির পাশে রিকশা চালকেরা থাকেন এমন একটা টিনের ঘরের কিছু অংশ ভাড়া নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। যেহেতু রাতে কাজ করা হতো, সে কারণে বেশির ভাগ রাতে ল্যাপটপ নিয়ে এই জায়গাগুলোতে বসে থাকা লাগত তার।

জাহিদ বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ফাইভার, আপওয়ার্কসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি তার বিদেশি কয়েকজন গ্রাহক রয়েছেন। যারা কাজের জন্য তাকে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করেন। জাহিদের আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সব মাসে সমান আয় হয় না। সাধারণত এক থেকে দেড় লাখ টাকা হয়। কখনও এর চেয়ে বেশি হয় আবার কখনও চল্লিশ পঞ্চাশ হাজারের বেশি হয় না।’ তবে বছরে যে টাকা আয় হয়, তাতেই বেশ স্বচ্ছলভাবে তিনি সংসার চালাচ্ছেন।

জাহিদ হাসান জয় বলেন, কাজ আয়ত্ত করতে প্রথম দিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। গ্রামে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে যাথাযথ গাইডলাইন পাওয়া কঠিন। এছাড়াও বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট কানেকশন সমস্যার কারণে রিমোট এরিয়াগুলো থেকে কাজ করতে সমস্যা হয়। যারা নিজেরা কখনও ফ্রিল্যান্সিং করে নাই তথা এই ফিল্ডের অভিজ্ঞতা নাই; গ্রাম এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। যে কারণে প্রশিক্ষণ নিয়েও যথাযথভাবে কাজ করতে পারেন না অনেকেই।