পাবনার চাটমোহরে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার রহস্য উদঘাটন, ৩ জন গ্রেফতার

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় চুরি করার সময় দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় প্রবাসীর স্ত্রী এবং তার ১০ বছরের শিশুকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, চাটমোহর দিঘুলিয়া গ্রামের মোজাম আলী ওরফে মোজাম্মেলের দুই ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (২৬), মো. হোসেন আলী (৩৭) এবং রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুর দত্তপাড়া মো. মোস্তাফা মিজীর ছেলে মো. হুমায়ন মিজী ওরফে হৃদয় (২৮)।

নিহত লাবনী খাতুন (৩৫) ও রিয়াদ হোসেন (৮) চাটমোহরের দিঘুলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী-সন্তান। আসামীদের মধ্যে মো. সাদ্দাম হোসেন ২০২২ সালের অক্টোবরে চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকায় একজন অটোরিকশাচালকসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামী।

পুলিশ সুপার বলেন, আব্দুর রশিদ গত ৭ বছর যাবৎ মালয়েশিয়া থাকেন। প্রবাসী রশিদের স্ত্রী লাবনী খাতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য গত কয়েক দিন আগে প্রায় ২৫ হাজার ইট কেনেন এবং ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলে বাড়িতে রাখেন। লাবনী খাতুনসহ তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদ ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিল।

পরের দিন সকালে ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো দেখে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে লাবনীর মরদেহ ছাগল রাখার ঘরে এবং ১০ বছরের ছেলে রিয়াদের মরদেহ বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, নিহত লাবনী খাতুনের এতো টাকার ইট কেনা এবং ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের খবরে আসামীদের ধারণা হয় তাদের কাছে অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আছে।

এই ধারণা নিয়ে আসামী মো. হোসেন আলী ভুক্তভোগীদের বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করে। পরবর্তী সময়ে তার আপন ছোটভাই সাদ্দাম তাদের পূর্বপরিচিত ফরিদপুরের আরেক চোর হুমায়ুন কবির হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ওই বাড়িতে চুরি করতে যায়।

একপর্যায়ে লাবনী খাতুন ও তার সন্তান রিয়াদ টের পেয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের হত্যা করে এবং এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিহত রিয়াদকে বাড়ির পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখে এবং লাবনীর মরদেহ গোয়াল ঘরে ফেলে রাখে।

পরে তারা স্বর্ণের রিং, চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দুইজোড়া রূপার নুপুর, রূপার পায়েলসহ মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার তদন্তের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য তথ্য প্রযুক্তি ও গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করে।